রাজশাহীর বাঘায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন শুরু করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের এক কলেজ ছাত্রী। গত বুধবার (১ ফ্রেরুয়ারি) রাত থেকে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের আড়পাড়া এলাকার প্রেমিক অমিত প্রামানিকের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। ঘটনার পর প্রেমিক অমিত কুমার বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানেই ছিল কলেজ ছাত্রী।
প্রেমিক অমিত প্রামানিক ওই গ্রামের অশিত প্রামানিকের ছেলে। ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী একই উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা। অমিত প্রামানিক এইচএসসি পাশ আর মেয়েটি এইচএসসির সেকেন্ড বর্ষের ছাত্রী।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারী) অমিত প্রামানিকের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মার সাক্ষাতে কথা হলে কলেজ ছাত্রী জানান, এক বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। মেসেঞ্জারে কথা হয়েছে বহুবার। গত বুধবার(১ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা সদরে বিউটি পার্লারে গিয়ে সাজু গুজু করিয়ে আমার কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেয়। পরে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই সেখান থেকে সটকে পড়ে অমিত। পরে অমিতের বাড়িতে উঠে পড়ি ও তার বাবা-মাকে জানায়। তখনও অমিত বাড়িতেই ছিল। পরে গ্রামের মাতব্বরদের নিয়ে বৈঠক বসিয়ে বিয়ে রেজিষ্টারের সিদ্ধান্তে রেজিষ্ট্রারও ডাকা হয়েছিল।
কিন্তু তার পরিবার সম্পর্ক মানতে রাজি হয়নি। পরে অমিতকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কোনো উপায় না পেয়ে বুধবার(১ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টা থেকে বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেন। যতদিন অমিত আমাকে বিয়ে না করবে, ততদিন আমি এখানেই অনশন করব। আর যদি এখান থেকে যেতেই হয় তবে আমার লাশ যাবে।’ যেহেতু সিঁদুর পরালে হিন্দু সাস্ত্রমতে বিয়ে হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে গেলেও সমাজ মেনে নেবেনা।
পলাতক থাকায় এ নিয়ে প্রেমিক অমিতের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি। তবে তার বাবা অশিত প্রামানিক বলেন, পরিচয় সুত্রে বন্ধুত্ব থাকতে পারে। বিউটি পার্লারে সিঁদুর পরালে বিয়ে হয়না। মন্দিরে পরাতে হয়। মেয়েটি আসার পর বৈঠকে হিন্দু সাস্ত্রমতে বিয়ের কথা বলে অভিভাবকদের মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। পরে সেটা হয়নি। রাতে মেয়ে আমার বাড়িতে উঠেছে। কলেজ ছাত্রীর মা বিউটি বিশ্বাস বলেন,এখন আর মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসার সুযোগ নাই।
সমাজ প্রধান গীরেন মন্ডল জানান, বিষয়টি নিয়ে গ্রামের অরুন সরকারের বাড়িতে বসেছিলাম। ছেলে বিয়ে করতে রাজি ছিল। তার বাবাও বিয়ে দিতে রাজি ছিল। রেজিষ্ট্রারকেও ডাকা হয়েছিল। মেয়ে পক্ষের দাবি ছিল বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা ও মন্দিরে মালা পরানোর। ছেলের বাবা চাচ্ছিল হিন্দু সাস্ত্রমতে বিয়ে দেওয়াসহ লেনদেনের। বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে পরে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। শালিসবর্গ উঠে চলে যায়। মেয়েটি ছেলের বাড়িতে উঠেছে। একই কথা বলেছেন সমাজের আরেক প্রধান অরুন সরকার।
হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রীষ্ট্রান ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি ও পূঁজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুজিত কুমার পান্ডে (বাকু) বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। রেজিষ্ট্রি হবে ,এমন মূহুর্তে এসে ছেলেকে সরিয়ে দেওয়ায় পরে বিয়ে হয়নি। মেয়েটি ছেলের বাড়িতেই আছে। এখন রেজিষ্ট্রি ,মন্দিরে সিঁদুর আর মালা পরিয়ে বিয়ে দিয়ে মেয়েকে তার মা-বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে পারবে। ছেলের বাবা চাইলে পরে আনুষ্ঠানিকতা করতে পারবেন।
অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। যদি মেয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয় তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply