চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলায় মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিনভর অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম। এই অভিযানে অবৈধভাবে ভাটা পরিচালনা করে বায়ুদূষণ করার অপরাধে ১৬টি অবৈধ ইটভাটার মালিককে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে অভিযান পরিচালনার পর আবারও সেই ইটভাটাগুলো সচল হয়েছে।
স্থানীয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার সারাদিন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজওয়ান উল ইসলাম। এই সময় পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধমে তারা ২ থেকে ৩টি ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য প্রস্তত করা ইট নষ্ট করে এবং ইট পোড়ানের জন্য বানানো কিলিম ভেঙে ফেলে। কিন্ত কোনো ইট ভাটার চুল্লি ভাঙা হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯ (সংশোধিত) অমান্য করায় ১৬টি ইট ভাটা মালিককে দুই লাখ করে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটা বিরোধী এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান আবু সাঈদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযানের একদিন পর থেকেই অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম আবার শুরু করা হয়। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ও মহারাজপুর ইউনিয়নের মেসার্স এম.এন.আর ফিক্সড ব্রিকর্স, মেসার্স টাটা জিগজ্যাগ হাওয়া ব্রিকস্, মেসার্স রোজ ঝিকঝাক হাওয়া ব্রিকস্ ও মের্সাস গ্রীন হাওয়া ব্রিকর্সসহ বেশকিছু ভাটা গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা ইট রোদে শুকাচ্ছেন ভাটার শ্রমিকেরা। আবার কোনো কোনো শ্রমিক চুল্লিতে কয়লা বা খড়ি দিচ্ছেন। আগের পোড়ানো ইট ভ্যানে করে ভাটা থেকে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এ সময় ভাটাটির কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, অভিযানে প্রতিটি ভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে জরিমানার পর থেকে আবারও ভাটা সচল রয়েছে।
মের্সাস টাটা জিগজ্যাগ হাওয়া ব্রিকস্ এর প্রোপাইটর মো. রুবেল আলী বলেন, আমাদের সব ধরনের কাগজ পত্র আছে। শুধু পরিবেশের কাগজ বা ছাড়পত্র ছিল না। এজন্য ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়া তারা (পরিবেশ অধিদপ্তর) আমাদের ভাটা বন্ধ রাখার বিষয়ে কিছু বলেনি। তাই ভাটা চালু রেখেছি।
মেসার্স গ্রীন হাওয়া ব্রিকসের প্রোপাইটর মো. আল-আমিন হাজী বলেন, আমার ভাটায় খড়ি ও কয়লা দুইটায় পোড়ানো হয়। গতকাল পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করেছিল। এই সময় ২ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং তারা চলে যায়। ভাটা বন্ধের বিষয়ে তারা কোনো কিছু না বলায় আমরা ভাটা চালু রেখেছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট ব্যবস্থা করেছিল। কিন্ত ঢাকা থেকে আগত ম্যাজিস্টেট ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে না দিলে আমাদের তো আর কিছু করার নেই। তবে অবৈধ ইটভাটাগুলোকে কয়েকদিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এই বিষয়ে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে আসা হয়েছে। তারা বন্ধ না করলে আমরা অবৈধ ইটভাটাগুলোতে আবারও অভিযান পরিচালনা করব।
Leave a Reply