শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। পরে তা মসজিদের দোতলায় গণনার জন্য নেওয়া হয়। দিনভর টাকা গণনা শেষ হয় রাত ২টার দিকে। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এবার ৪ মাস ১০ দিন পর মসজিদের নয়টি দানবাক্স ও একটি ট্যাঙ্ক খোলা হয়। এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর তিন মাস ২০ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২৩টি বস্তায় রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লক্ষ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।
এর আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছিল এ মসজিদের ৮টি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তখন সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনা শেষে রেকর্ড ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া একটি ডায়মন্ডের নাকফুলসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া যায়।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। পরে ২৭টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয় গণনার জন্য।
টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শেখ জাবের আহমেদ, সহকারী কমিশনার রওশন কবীর, মাহমুদুল হাসান, সামিউল ইসলাম, আজিজা বেগম, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এ মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। পাগল সাধকের মৃত্যুর পর স্থানটি পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা আছে। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য।
এদিকে মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়। মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে “পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স”। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
Leave a Reply