1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

শ্যালক-দুলাভাইয়ের অনলাইন ফাঁদ

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৩০৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

শাকিল ও রনি, সম্পর্কে তারা শ্যালক-দুলাভাই। অনলাইনে ফাঁদ পেতে অর্থ আত্মসাৎ তাদের কাজ।

তারা ঘরে বসে ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন সাইট থেকে ই-মেইলের পাশাপাশি ভিসা, মাস্টারকার্ড ও পেপালসহ বিভিন্ন ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেন।

এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আইডি হ্যাক করে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে জেলও খেটেছেন। কিন্তু জামিনে বের হয়ে ফের শুরু করেন প্রতারণা।

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিভিন্ন কার্ডের তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য (আইফোন, ইলেক্ট্রনিকস ও কসমেটিকস পণ্য) অনলাইনে অর্ডার করতেন এই প্রতারক চক্রের সদস্য শ্যালক-দুলাভাই।

সম্প্রতি, জার্মানি-ভিত্তিক একটি কার্গো কোম্পানির সার্ভার ও ই-মেইল আইডি হ্যাক করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আইপি অ্যাড্রেস বিশ্লেষণ করে এবং অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর থেকে হ্যাকার চক্রের মূলহোতা (দুলাভাই) মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি (৩৮) ও তার সহযোগী (শ্যালক) মো. মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে (২৪) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। অভিযানে তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, তিনটি মোবাইল ফোন, তিনটি সিম কার্ড ও একটি রাউটার জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, শুধু জার্মানি-ভিত্তিক একটি কার্গো কোম্পানির সার্ভার ও ই-মেইল আইডি হ্যাক করে অর্থ আত্মসাৎ-ই নয়, চক্রটি ডার্ক ওয়েব থেকে আর্থিক তথ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশের ব্যাংক ক্রেডিট-ডেবিট, মাস্টারকার্ড হ্যাক করে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণা করছিল।

ভুক্তভোগী এম এ আহসানুল বারী তার অভিযোগে বলেন, আমি জার্মানিতে অবস্থিত কারকন কার্গো লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং কারকন কার্গো কন্ট্রোল বিডির সত্ত্বাধিকারী। কেউ আমার মেইল আইডি হ্যাক করে জার্মানিতে অবস্থিত মূল কোম্পানিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে খরচ বাবদ চার হাজার ৮০০ ডলারের ডিমান্ড নোট দিয়ে একটি মেইল করে। এতে কোম্পানিও ভেরিফাই করে অর্থ পাঠিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি ডার্ক ওয়েব থেকেই কারকন গ্রুপের (জার্মানি) বাংলাদেশ প্রতিনিধির ই-মেইলের তথ্য পান। এই তথ্য দিয়ে তিনি কোম্পানির ই-মেইল অ্যাড্রেসে ঢুকে জার্মানিতে অবস্থিত মূল কোম্পানির কাছে খরচ বাবদ চার হাজার ৮০০ ডলার চেয়ে ই-মেইল করেন।

তিনি বলেন, ই-মেইলে মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি আগের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য উল্লেখ করেন। নতুন অ্যাকাউন্ট দেখে জার্মানি থেকে আবারও অ্যাকাউন্টটি কনফার্ম করার জন্য বলা হয়। তিনি আবার কনফার্ম মেইল দিয়ে তার পাঠানো সব ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেন। এতে কোম্পানি তার দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী এম এ আহসানুল বারী দ্রুত কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোম্পানি সুইফট সিস্টেম থেকে লেনদেনটি স্থগিত করে।

যেভাবে প্রতারক হয়ে ওঠেন রনি

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনি। তার বাবা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় বসবাস করেন। তবে রনির জন্ম হয় ঢাকার তেজগাঁও এলাকায়। রনির বয়স যখন ৫-৬ বছর, তখন তার মা-বাবার মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটে।

মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ওরফে রনি তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া হোসেন আলী হাই স্কুল থেকে ২০০০ সালে ব্যবসায় শাখা থেকে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০০০-২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। একই সঙ্গে রানী মার্কা ঢেউটিনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজও করেছেন।

পরে রনি ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি অনলাইন ও ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে পুরাতন কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ কেনা-বেচার কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি চকবাজার থেকে কসমেটিকস কিনে এনে সেগুলো ঢাকার গাউছিয়া ও নিউমার্কেটে বিক্রি করত।

২০১৫ সালে রনি বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরের মতলবে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সাল থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে পুনরায় ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে বসবাস করেন। এতে পুরাতন কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনা-বেচার কাজ চালু রেখেছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় হ্যাকারদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে হ্যাকিং সংক্রান্ত কাজও শিখে রনি।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ওরফে রনি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনাবেচার পাশাপাশি হ্যাকারদের সঙ্গে অনলাইন প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। অনলাইন প্রতারণার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অন্য হ্যাকারের সঙ্গে তিনিও গ্রেফতার হন।

২০২২ সালের ১ আগস্ট রনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তার শ্যালক মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় ই-মেইলের পাশাপাশি ভিসা, মাস্টারকার্ড, পেপালসহ বিভিন্ন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন। আইফোন, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ও উন্নতমানের কসমেটিকস পণ্য প্রতারণার মাধ্যমে তিনি বিদেশি নাগরিকদের তথ্য ব্যবহার করে অর্ডার করতেন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট