1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পিঁড়িতে বসা সেলুন

মহানগর ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৪৭৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

এক সময় গ্রামগঞ্জের হাট বাজারে পিঁড়িতে বসে বৃদ্ধ,যুবক ও ছোট্ট বাচ্চাদের চুল কাটার ব্যস্ত সময় পার করত নাপিত বা নর সুন্দররা। একটি কাঠের বাক্সে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকারি, পাউডার ও বসার জন্য থাকত জল চৌকি কিংবা পিঁড়ি। এগুলো দিয়ে মানুষকে বসিয়ে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে মাথাকে দুই হাঁটুর মাঝে ঢুকিয়ে পিতলের চিরুনি আর কাঁচি দিয়ে কাটতেন চুল। আশি নব্বইয়ের দশকে এভাবে পিঁড়িতে বসিয়ে গ্রামবাংলার মানুষের চুল-দাড়ি কাটার সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না।
সভ্যতার বির্বতনে মানব জীবনের গতিধারায় পরিবর্তন ও নতুনত্বের ছোঁয়াই জেন্টস পার্লারগুলোতে বাহারি রংঙের হেয়ার স্টাইলের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে হাট- বাজারে পিঁড়িতে বসা সেলুনগুলা। আধুনিতায় সেই সকল নরসুন্দরদের স্থান দখল করে নিয়েছে নামি দামি সেলুনগুলো।

পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের চকসমশের গ্রামের এমনই একজন নরসুন্দর হলেন মহিনী শীল। তিনি তার পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যগত পেশা টিকিয়ে রেখেছেন । তার পিতা কালিপদ শীল এর মৃত্যুর পরে তিনিই এখন বিভিন্ন হিন্দু পাড়ায় ঐতিহ্যগতভাবে নরসুন্দরের কাজ করছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ে, শ্রাদ্ধ, শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরবর্তীতে সেই সব বাড়িতে ডাক পড়ে তার। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। বাপ দাদার রেখে যাওয়া আদি পেশা তাই ধরে রেখেছি। এখন আর ব্যবসা নেই। তখন ধানের বিনিময়ে চুল দাড়ি কেটে দেওয়া হতো। বছর শেষে দেড়-দুইশ মণ ধান পেতাম। তরি -তরকারীও খুব একটা কিনা লাগতনা। ওই দিনগুলোই ভালো ছিল। এখন দিন শেষে ৯০-১০০ টাকা কাজ করতে পারি। আমার কাছে যারা আসেন তাদের বেশির ভাগই বয়স ষাটের ঊর্ধ্বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগে সাপ্তাহিক বাজার ছাড়াও সারা বছর মানুষ আমাদের বাড়িতে এসে বাবার কাছে পিঁড়িতে বসে চুল কাটাতো। চুলের কি স্টাইল হবে তা মুরুব্বিরা ঠিক করে দিতো। অনেকে এসে বলতেন মাথা একেবারে মুন্ডন করে দিবে। মুন্ডন মানে ন্যারা করে দেওয়া। চুল হাতে ধরা যাবে না। কারো চুল সামনে দিয়ে একটু বড় হলে মুরুব্বিরা আবার বাচ্চার কান ধরে নিয়ে আসতেন। এক সঙ্গে চার-পাঁচজন মানুষ আসতেন, তখন অনেক জাঁকজমক ছিল।

উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে সরাইল বাজারের নর সুন্দর বেলাল বলেন, ৪৭ বছর ধরে বাপদাদার ঐ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি। ১০ পয়সা থেকে চুল দাঁড়ি কাটার কাজ করছি। এখন আর তেমন লোকজন হয় না। হাট বাজারের আনাচে কানাচে সেলুন ও জেন্টস পার্লার গড়ে উঠেছে। সেখানে কাঁচির পরিবর্তে মেশিন দ্বারা চুল কাটায় মধ্য বয়স্করা পর্যন্ত সেখানেই চুল দাঁড়ি কাটতে ভীড় করেন। তারপরও আমাদের নিকট যে কয়জন আসে তারাও বয়স্ক লোকজন। ফলে আমরা যারা, পূর্বপুরুষের পেশা ধরে আছি তাদের ব্যবসা কমে গিয়ে দিন চলা কঠিন হয়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দু’একজন পিঁড়িতে বসা নরসুন্দর কে পাওয়া গেলেও কাজের খড়ায় ভুগছেন তারা। তাই অনেকেই পেশা বদলীয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন বলে জানান। অপরদিকে সময়ের সঙ্গে সেলুন পেশার চাকচিক্য ও কদর বেড়েছে। বেড়েছে আয়। কমেছে হাট-বাজারে বট বৃক্ষের শীতল ছায়ার নিচে কিংবা প্রখর রোদ্রে লোহার উঁচু শিখে টানানো ছাতায় ঘেরা পিঁড়িতে বসা সেলুনের। তাই এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জে গাছের নিচে পিড়িতে বসা সেলুন গুলো। হয়ত ধীরে ধীরে এগুলো একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট