স্বামীর সাক্ষাৎ পেতে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী (২৯)। মোহাম্মদপুর থানার বছিলা এলাকার এ ঘটনায় পাঁচ ধর্ষণকারীর প্রত্যেককেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বিল্লাল হোসেন (২৫), আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬), রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (২৬)।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
এর আগে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বছিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে আজিমুল হক জানান, ভুক্তভোগী নারী স্বামী-সন্তানসহ মোহাম্মদপুরের বছিলায় বসবাস করতেন।
চার মাস আগে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এর মধ্যে কিছু না জানিয়েই স্বামী তাকে তালাক দেন।
গত ২৫ জানুয়ারি দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা থেকে তালাকের কারণসহ এ বিষয়ে আলোচনা করতে স্বামীর সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি তার আগের বাসায় এসে তার স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। বাড়ির মালিক, পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়ারা কেউ তার স্বামী-সন্তানদের ঠিকানা দিতে পারেনি।
এভাবে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত বছিলা চল্লিশফিট, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেনসিটি হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও এর আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুজি করে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বছিলা চল্লিশফিট তিন রাস্তার মোড় থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য একটি রিকশা ভাড়া নেন।
কিন্তু রিকশাওয়ালা ওই নারীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বছিলা এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাতে থাকেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। ওই নারীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ও তার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন।
প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে বছিলা ফিউচার টাউনের একটি জায়গায় গিয়ে রিকশাচালক তার সঙ্গীরাসহ ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচজন ভিকটিমকে হত্যার হুমকি দিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে নারীর চিৎকারে এলাকায় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড ও লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা ভিকটিমকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। এরপর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে ভিকটিমকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওসিসিতে পাঠানো হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ ক্লুলেস। ভিকটিম নারীও আসামিদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের অসংখ্য সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে ভিকটিম নারীর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেফতার পাঁচজন ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ও দুজন আশপাশে অবস্থান করে সহযোগিতা করে। ধর্ষণকারী পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে সহায়তাকারী বাকি দুজনকেও গ্রেফতার করে ফেলবো।
ওই নারীর স্বামীর সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তার সন্ধান পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply