চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী। এতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল ইসলামসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি থানায় রেকর্ডের নির্দেশ দেন। ২৪ ঘণ্টা পার হলেও মামলাটি এখনো রেকর্ড করা হয়নি। এর মধ্যে স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে চলে গেছেন ওসি খাইরুল ইসলাম।
ওসি খাইরুল ইসলামের ছুটি নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশ উত্তর জোনের ডিসি মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ওসির স্ত্রী অসুস্থ, এ কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন।
চান্দগাঁও থানার ওসির দায়িত্ব পাওয়া মো. ছাবেদ আলী বলেন, আপাতত এখানে আমি দায়িত্ব পালন করছি। আদালতের নির্দেশে মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদেশের কপি এখনো আমার হাতে আসেনি, তাই মামলাটি এখনো রেকর্ড করা হয়নি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ২০১৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় থাকতেন তিনি। সেখানে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত ২৯ আগস্ট শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। মামলার অভিযোগ শুনে ওইদিনই অপরাধ আমলে নিয়ে শহীদুল্লাহ ও কায়সারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন বিচারক।
ওই সমন গায়েব করে ফেলেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ। ফলে আদালতে হাজির হওয়ার কোনো সমন পাননি শহীদুল্লাহ ও কায়সার। এরপর মামলার পরবর্তী তারিখ দেন আদালত। ওই তারিখে মামলার বাদী তানিয়া হাজির না হওয়ায় সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী। ওইদিন আদালত দুই আসামি শহীদুল্লাহ ও কায়সারের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন।
এরপর গত ৩ অক্টোবর রাতে শহীদুল্লাহকে আদালতের ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান শহীদুল্লাহ।
এ ঘটনায় সোমবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে ওসি খাাইরুলসহ মোট নয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহত শহীদুল্লাহর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ের থানায় রেকর্ডের নির্দেশ দেন এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের আদেশ দেন।
ওসি খাইরুল ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন, চান্দগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ, এএসআই সোহেল রানা, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মবিনুল হক, থানা এলাকার বাসিন্দা এসএম আসাদুজ্জামান (৫২), মো. জসীম উদ্দীন (৩৭), মো. লিটন (৪৮), রনি আক্তার তানিয়া (২৬) ও কলি আক্তার (১৯)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, থানায় নেওয়ার পর অন্যান্য বিবাদীদের যোগসাজশে শহীদুল্লাহকে নির্যাতন করেন ওসিসহ অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। এমনকি পরিবারের লোকজন ওষুধ দিতে চাইলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা সেগুলোও পৌঁছাতে দেননি। একপর্যায়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহীদুল্লাহ মারা যান।
এদিকে, যে মামলায় শহীদুল্লাহ গ্রেপ্তার হয়ে মারা গেছেন, গতকাল (সোমবার) আদালতে হাজির হয়ে সেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন বাদী তানিয়া। আদালত এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
Leave a Reply