1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

রাজশাহীর চিরচেনা শখের হাঁড়ি

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩
  • ২১২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

লোকচিত্র বাংলাদেশের লোক ও কারু শিল্পের এক বর্ণাঢ্য ও ঐতিহ্যবাহী ভুবন। নানা সৃষ্টিতে রূপ লাভ করেছে সৃজনশীল চিত্রশিল্প। আবহমানকালের লোক সমাজের দৈনন্দিন জীবন, ধর্ম বিশ্বাস, লৌকিক আচার-আচরণ ধারণ করে আসছে এ দেশের এক অমূল্য সম্পদ চিত্রিত হাঁড়ি বা শখের হাঁড়ি।

চিত্রিত মৃৎপাত্র অর্থাৎ রং দিয়ে নকশা আঁকা এক ধরনের পাত্র হচ্ছে শখের হাঁড়ি। আকার-আকৃতির দিক থেকে সাধারণ হাঁড়ির মতোই, পার্থক্য শুধু গায়ে। সাধারণ হাঁড়িতে খুব একটা রং ও নকশা করা থাকে না; কিন্তু শখের হাঁড়ির গায়ে উজ্জ্বল রং দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চিত্র আঁকা হয়। দৃশ্যমান করা হয় ফুল, লতা-পাতা, পাখি, মাছসহ নানা কিছু।

অঞ্চলভেদে এসব চিত্রিত হাঁড়ির রয়েছে বিভিন্ন নাম। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই চিত্রিত হাঁড়ি, কলসি পাওয়া যায়। এরপরও ঢাকার ধামরাই, নয়ারহাট, টাঙ্গাইলের কালিহাতি, রাজশাহীর বসন্তপুর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয়া প্রভৃতি এলাকার চিত্রিত হাঁড়ি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

রাজশাহীর শখের হাঁড়িতে রয়েছে বাংলাদেশের আবহমানকালের ঐতিহ্য।বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কুমারেরা নকশাদার হাঁড়ি তৈরি করলেও বিষয়বৈচিত্র্য এবং ব্যবহার উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রাজশাহীর চিত্রিত শখের হাঁড়িই বিখ্যাত।

“বৈশাখী আর গ্রমীণ মেলায়
শিশু-বুড়ি নানিরা যায়
শখের মাটির হাঁড়ি ছাড়া
নানিদের হাত কি মানায়।
নানা হে।”

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী নাট্য গম্ভীরায় নানা-নাতির কথপোকথনে এভাবে ফুটে উঠেছে এ অঞ্চলের বিখ্যাত শখের হাঁড়ির কথা। মেয়ের বিয়েতে শখের হাঁড়িভর্তি মিষ্টি উপহার হিসেবে পাঠানো হবে, একসময় এটা ছিল রাজশাহীর মানুষের বিশেষ রীতি। বিশেষত ওই অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি তথা মানুষের জীবনযাপনে শখের হাঁড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত।

শৌখিন জিনিস হলেও প্রাত্যহিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা ছিল অনস্বীকার্য। মূলত খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হতো শখের হাঁড়ি। রান্না বা শোবার ঘরের চালে পাটের তৈরি শিকায় ঝুলিয়ে রাখা হতো এ হাঁড়ি। তাতে রাখা হতো বিভিন্ন ধরনের খাবার।

এ ছাড়া নতুন আত্মীয়ের বাড়িতে মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হতো এটি। প্লাস্টিক, কাচ প্রভৃতি দিয়ে তৈরি তৈজস সহজলভ্য হওয়ার কারণে বর্তমানে শখের হাঁড়ির ব্যবহার উপযোগিতা কমে গেছে অনেক। এখন শুধুমাত্র শৌখিন পন্য হিসেবে ঠাঁই হয়েছে শখের হাঁড়ির। এর ফলে ধীরে ধীরে মৃৎশিল্পীরা বন্ধ করে দিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ি তৈরির কাজ। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বসন্তপুর গ্রামের মাত্র একটি পরিবার এখন শখের হাঁড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এই পরিবারের প্রধান সুশান্ত কুমার পাল বিখ্যাত শিল্প শখের হাঁড়িকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

বাঙালির জীবনসম্পৃক্ত বিভিন্ন শৌখিন শিল্পোকরণের মধ্যে শখের হাঁড়ি অন্যতম। এর রং, নকশা এবং মোটিফের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় চিরায়ত বাঙালি মানুষের হারিয়ে যাওয়া আদিমতম ইতিহাসের স্মারক। উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রতিদিনের জীবন, ধর্ম-সংস্কৃতি, আনন্দ-বেদনা এবং চিন্তার সাথে শখের হাঁড়ি একাকার হয়ে আছে। অন্য সময়ে শখের হাঁড়ির দেখা না মিললেও নববর্ষের মেলা আর বসন্ত বরণে এর ব্যবহার দেখা যায়।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট