কমলাপুর, গোপীবাগ ও মুগদা এলাকার বাসিন্দারা এই হাট থেকে কোরবানির জন্য পশু কিনে থাকেন। প্রস্তুত না হওয়ায় এই হাটে এখনো পশু আসা শুরু করেনি।
মঙ্গলবার (২০ জুন) সকালে কমলাপুর হাটের বিভিন্ন অংশ ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাট প্রস্তুত হতে আরও অন্তত তিন দিন লাগবে। সবার আশা, শুক্রবার থেকে এখানে পশু বেচাকেনা শুরু করা যাবে।
হাটের প্রধান প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে কমলাপুর ও মুগদার সংযোগ সড়কে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ দিয়ে ও গোপীবাগ হয়েও পশু প্রবেশের পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ পথে হাসিল দেওয়ার কাউন্টার বসানো হচ্ছে। এছাড়া কমলাপুরের উট খামারের আগে, দেওয়ানবাগ শরীফের সামনে ও গোপীবাগের প্রবেশমুখেও হাসিল সংগ্রহের কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে। হাট শুরুর আগে কাউন্টারের সংখ্যা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০টিতে দাাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের অন্তত ১০ দিন আগেইরাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলো সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। বেশির ভাগ হাট প্রস্তুতের কাজ শেষের দিকে। কমলাপুরের অস্থায়ী এই পশুর হাটের প্রস্তুতিও এখন শেষ পর্যায়ে। হাটের পাশে অবস্থিত সাদেক হোসেন খোকা কনভেনশন সেন্টারে হাট-সংশ্লিষ্ট কর্মীদের অস্থায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাট প্রস্তুতে কাজ করা মিস্ত্রি সুমন মিয়া জানান, হাট প্রস্তুত হতে আরও তিন দিন লাগবে। এরপর হাটে গরু-ছাগল উঠবে। গতকাল কাজ শুরু হয়েছে। হাটের নির্ধারিত জায়গায় বাঁশ দিয়ে গরু বাঁধার উপযোগী করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে আসা রুহুল বেপারী বলেন, এ বছর আমি ৪০টি গরু আনব। গরু নিয়ে আসার আগে জায়গা নির্ধারণ করছি। হাটে পশু বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো জায়গা হওয়া জরুরি। বৃহস্পতিবার আমার কিছু গরু ঢাকায় ঢুকবে।
কাজী আলাউদ্দিন নামে এক বেপারী বলেন, এ বছর খামার থেকেই অনেকে গরু কিনছেন। অনেকে আবার মোবাইল ফোনেও নাকি গরু কিনছেন। এবার আমি ৮০ থেকে ১০০টি গরু নিয়ে আসব। বেশি বড় গরুর চাহিদা একটু কম। সবাই মাঝারি মানের গরু চায়, তাই মাঝারি আকৃতির গরু বেশি আনব। তবে কয়েকটি বড় গরুও থাকবে। আশা করছি, ভারতের গরু না ঢুকলে এবার পশুর সঠিক দাম পাওয়া যাবে।
হাট পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক সিরাজ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (২২ জুন) থেকে হাটে পশু আসবে। শুক্রবার (২৩ জুন) থেকে পশু বিক্রি শুরু হবে। মূল বিক্রি ঈদের আগের চার-পাঁচ দিনের মধ্যে হয়। এ বছর ২০-২৫টি স্থায়ী হাসিল কাউন্টার এবং ৫-৭টি অস্থায়ী হাসিল কাউন্টার থাকবে। সব মিলিয়ে এ বছর প্রায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল সংগ্রহ করা হবে।
তিনি বলেন, এ বছর অনেক বেশি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিতে হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী হাসিলের রেট বাড়াতে পারছি না।
সিরাজ বলেন, এ বছর ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে হাটে। গরু-ছাগলের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া পাইকারদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। শুক্রবার থেকে পুরোদমে হাট শুরু হবে। এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের টিম জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করবে।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে হাট বসা নিষিদ্ধ থাকবে। পশুহাটে পশু চিকিৎসক থাকবেন। পশু কোনো নির্ধারিত হাটে নেওয়ার জন্য জোর করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসিলের পরিমাণ সাইন বোর্ডে লেখা থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোরবানির পশুবাহী যানবাহন থামানো যাবে না। পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে, জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন ও এটিএম বুথও থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে পশুর হাট। এ বছর সারা দেশে কমবেশি চার হাজার ৩৯৯টি পশুর হাট বসবে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। এসব হাটে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক-মহাসড়কে যাতে কোনো প্রকার হাট না বসে, আমরা সে ব্যবস্থা নেব। পশুবাহী যানটি কোন হাটে যাচ্ছে তা সামনের ব্যানারে লেখা থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা অন্য কেউ পশুবাহী যানবাহন সড়ক-মহাসড়ক কিংবা নৌপথে থামাতে পারবে না সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া। কেউ থামালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply