জান্তাশাসিত মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উপপ্রধান সাই কায়াও দু সামরিক সরকারবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহী যোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের পূর্বাংশে থিঙাগাইয়ুন এলাকায় তাকে গুলি করা হয়।
সামরিক বাহিনীর তথ্য টিমের এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয় এ খবর। ‘সরকারবিরোধী সশস্ত্রগোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী’— বাক্যটির বাইরে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি বিবৃতিতে।
গত মাসে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল ন্যাশাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তার একমাসের মধ্যেই নিহত হলেন কমিশনের উপপ্রধান।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী এনএলডি সরকারকে উচ্ছেদ করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন, ক্ষমতা দখলের পর সরকারপ্রধানও হন তিনি।
কিন্তু সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপের পরই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন দেশটির বেসামরিক গণতন্ত্রপন্থী লোকজন। জান্তার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সেই বিক্ষোভ দমন শুরু করলে একসময় তা স্থিমিত হয়ে যায়, কিন্তু আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশ এ সময় যোগ দেওয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোতে।
পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসও তেমনই একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে অন্যান্য গোষ্ঠীর তুলনায় এই গোষ্ঠীটি সম্প্রতি জান্তার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই চোরাগুপ্তা হামলা চলাচ্ছেন এই গোষ্ঠীর সদস্যরা এবং গত কয়েক মাসে নিম্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এই নিহতদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তাও আছেন।
এসব হত্যাকাণ্ডের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য-উপাত্ত সামরিক বাহিনীর কাছে আছে, তবে এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সামনে বরাবরই নিশ্চুপ থেকেছেন জান্তা মুখপাত্ররা।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর বিদ্রোহীদের হাতে প্রথম যে সরকারি কর্মকর্তা নিহত হন, তিনি ছিলেন মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইয়াঙ্গুনে নিজ বাসভবনের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
Leave a Reply