চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছে সরকার। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে চিত্র পাল্টে গেছে। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) ৯ মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা মন্দার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না ও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বাজেটের ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে বাজেটের অর্থ জোগাতে সরকার ব্যাংক ঋণের প্রতি ঝুঁকছে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। আর মার্চে তা বেড়ে ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মার্চ মাসে সরকারে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৫০ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার করেছে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৯ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য অনুযায়ী আগামী জুন পর্যন্ত আরও ৫৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে সরকার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিল ৪৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থিতি ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ১৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা দিয়েছে অন্য ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ সুদহারের চেয়ে ট্রেজারি বিলের সুদহার কম হওয়ায় বাণিজিক ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল বন্ড কেনায় আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই এসব ট্রেজারি বিল বন্ড কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ না বেড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬৬ শতাংশ বেশি।
তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ৯ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছে ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বাজারে তারল্য সরবারহ বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন উভয় সংকটে পড়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের ৯ শতাংশ সুদহার সীমা অপরিবর্তিত থাকায় আমানতের সুদহার বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে গড় মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৭৮ শতাংশ।
বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়ও। এখন দৈনন্দিন খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা শর্ত দিয়েছে সরকার। ফলে সঞ্চয়পত্র কিনছে কম ভাঙছে বেশি মানুষ।
সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকার। বিপরীতে ওই মাসে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং বিক্রির চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ নিট বিক্রির ঘাটতি (ঋণাত্বক) দাঁড়িয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
Leave a Reply