নেই মানুষের ভিড় কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার তাড়া। টিকিট পেতে হাহাকার অথবা দালালের খপ্পরও যেন উধাও। কমলাপুর স্টেশন জুড়ে বিরাজ করছে নীরবতা। এ যেন এক ভিন্ন কমলাপুর রেল স্টেশন। এ রেল স্টেশনেই টিকিট বিক্রির দুদিন আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত লাখো মানুষ।
গত ঈদেও একটি টিকিট কিনতে দুই-তিন দিন একটানা অপেক্ষা করেছে অনেকেই। কেউ দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও টিকেট না পেয়ে ফিরেছে খালি হাতে। বেড়েছে আক্ষেপ-অপেক্ষা আর প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হবার উৎকণ্ঠাও। চিরচেনা সেই কমলাপুর আজ বদলেছে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির কাউন্টার এবার একদম ফাঁকা। স্টেশনে কেবল নিয়মিত যাত্রীদের আনাগোনা।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রেল মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর ঈদযাত্রা ও ঈদের ফিরতি যাত্রার শতভাগ টিকিট অনলাইন মাধ্যমে বিক্রি হওয়ায় স্টেশনটি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এদিকে আজ (শুক্রবার) থেকে ঈদযাত্রার প্রথম দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে নির্ধারিত সংখ্যক সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
অনলাইনে টিকিট কিনতে আগ্রহী ফয়সাল আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, আমি বারবার চেষ্টার পর অনলাইনে টিকিট কিনতে পেরেছি। বেশিরভাগ সময় সার্ভারে সমস্যা করতে দেখা গেছে। অনলাইন টিকিট বিক্রি পদ্ধতি আরও সহজ করতে ওয়েবসাইট আরও গতিশীল করলে ভালো হবে।
অনলাইন থেকে টিকিট প্রত্যাশী ইসমাম হোসেন বলেন, প্রতি বছর অফলাইনে টিকেট কাটার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বছর ৭ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তিনটি টিকিট পেয়েছিলাম। পরিবারের জন্য পাঁচটি টিকিট প্রয়োজন হলেও দুটি টিকিট না পেয়েই ঘরে ফিরতে হয়েছিল। এছড়াা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট তো ছিলই। তবে এ বছর অনলাইনে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করে ভালো হয়েছে। টিকিট পাই আর না পাই, এত সময় তো দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না।
সাথী খাতুন নামের আরেক টিকিট প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি জরুরি প্রয়োজনে বাসায় যাচ্ছি। এখনো ঈদের অগ্রিম টিকিট কেনার চেষ্টা করিনি। ঈদের আগে আবার যখন যাত্রা করব, সেই টিকিট অনলাইন থেকে নেব। অনলাইনে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করে ভালোই হয়েছে।
কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৮ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ১৮ এপ্রিলের টিকিট, রোববার (৯ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ১৯ এপ্রিলের টিকিট, সোমবার (১০ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ২০ এপ্রিলের টিকিট ও মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ২১ এপ্রিলের টিকিট। প্রতিদিন বিক্রি করা হবে ২৫ হাজার ৭৭৮টি টিকিট।
রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সহজ ডটকম প্রতি মিনিটে বিক্রি করতে সক্ষম ৮ হাজার টিকিট। একসঙ্গে ১০ লাখ লোক তাদের সাইটে প্রবেশ করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ঈদের ফেরত যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে ১৫ এপ্রিল থেকে। ১৫ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৫ এপ্রিলের, ১৬ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৯ এপ্রিলের ও ২০ এপ্রিল বিক্রি হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট।
এর আগে, রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট (১৭-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) শতভাগ শুধু অনলাইন/মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কেনা যাবে। টিকিট কিনতে রেলওয়ে টিকিটিং ওয়েব পোর্টাল, রেলসেবা অ্যাপ বা যেকোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করার মাধ্যমে এনআইডি/পাসপোর্ট/জন্মনিবন্ধন যাচাইপূর্বক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা\বিরতি থাকবে না। এছাড়া ঈদের সময় ভারতগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ও মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
Leave a Reply