1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প

মহানগর ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৪৭১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

 

অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাউফলের বাঁশ শিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বাঁশ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছেন। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, বাউফলের দাসপাড়া, বগা, নওমালা, কাছিপাড়া ও মদনপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিগত কয়েক দশক ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। একসময় বাউফলে গৃহস্থ পর্যায়ে প্রচুর বাঁশ উৎপাদিত হতো। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও বাউফলসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর বাঁশ আনা হতো। ওই বাঁশ দিয়ে চালুন, কুলা, সাঝি, ধান-চাল ও ডাল সংরক্ষণের জন্য মোড়া, বাজার করার খাড়ই (টোনা), মাটি কাটার বিড়া, চাল মাপার পুরা, মাছ ধরার পল্লা, চাষাবাদের জন্য চঙা, চাল ধোয়ার ঝাঁঝড়ি, ঝুড়ি, ঠাকনা ও সৌখিন অনেক পণ্যসহ গৃহস্থালী কাজের অনেক জিনিস তৈরি করা হতো। এগুলো প্রত্যেক পরিবারের জন্যই ছিল অপরিহার্য্য।

কিন্তু কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকমের পণ্য আসায় হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। একদিকে যেমন এলাকায় বাঁশ উৎপাদন নেই, তেমনি চট্টগ্রাম থেকেও কোনো বাঁশ এ অঞ্চলে আসছে না। অপরদিকে, প্লাস্টিকের বাজারে প্রতিযোগিতায় বাঁশের পণ্যগুলো টিকতেও পারছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল কলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাউফলে হাতেগোনা ১৫ থেকে ১৬টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোনো রকমে টিকে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরুষদের পাশাপাশি বাঁশ শিল্পের সাথে তিন শতাধিক নারী জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া পরিবারের মেয়ে সন্তানরাও এ কাজে সহায়তা করত। বাঁশের কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী ছিলেন এবং তাদের কাছে জমাকৃত টাকা মেয়ের বিয়ে কিংবা স্বামী-সংসারের প্রয়োজনীয় অন্য কাজে লাগাতেন। এখন কাজ না থাকায় ওই নারী শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছেন।

বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত অঞ্জনা নামের এক গৃহবধূ জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হওয়ায় এখন আর লাভ হয় না। ফলে তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। অনিমা, মায়া রানী ও অর্চনা রাণী নামের বাঁশ শিল্পীরা জানান, কাজ না থাকায় তাদের হাতে কোনো টাকা পয়সা থাকে না। ফলে নিজের রুচি কিংবা চাহিদা মোতাবেক কোনো জিনিষপত্রও কিনতে পারছেন না। যে কোনো প্রয়োজনে স্বামী বা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। তাদের অভিমত, বাঁশ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে বাজারে বাঁশপণ্যের খাজনাবিহীন বিক্রির সুযোগ করে দিতে হবে। করতে হবে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারিভাবে প্লাস্টিক ব্যবহারের খারাপ দিকগুলো প্রচার করতে হবে।

সচেতনমহল মনে করেন, এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ভ‚মিকা নিচ্ছে না। বাঁশ শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। সে সঙ্গে পেশায় জড়িতদের তালিকা করে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত। এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিজুষ চন্দ্র দে বলেন, শিল্পটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ। আমরা চেষ্টা করব এদেরকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে এ শিল্পকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট