রাজশাহী নগরীর হেতমখাঁ এলাকায় সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তায় গেট নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সিটি করপোরেশনের ওই রাস্তায় গেট নির্মাণ করে মূলত পাঁচটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে ভূক্তভোগীদের উল্টো নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ ও বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ওই গেটটি ভাঙ্গার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরীর হেতেম খাঁ হরিজন পল্লী এলাকায় সিটি করপোরেশনের আরসিসি একটি রাস্তার মুখে বিশালাকার গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। গেটের কারণে মোটরসাইকেল বা রিকশাও চলাচল করতে পারছে না। পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে পকেট গেট দিয়ে।
ভূক্তভোগী সাংবাদিক মামুন রেজা জানান, ‘গত ২৪ মার্চ হরিজন পল্লী এলাকায় সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্মিত রাস্তার শেষ মাথায় গেটটি নির্মাণ করেছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রামেক হাসপাতোলের নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসক সাবের আলী, সাহিদ আলীসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী। অথচ এই রাস্তাটি দিয়ে সিটি করপোরেশনের বিদ্যুতের পোল, গ্যাস লাইন, পানির লাইনও গেছে। এমনকি সিটি করপোরেশন থেকে রাস্তাটি ইট দিয়ে পাকাকরণ হয়েছে। সেই রাস্তার মুখ বন্ধ করে মামুন রেজাসহ আরও অন্তত ৪টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করতে গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। যেন ওই পরিবারগুলো ওইদিক দিয়ে চলাচল করতে না পারেন।
‘এছাড়াও ওই রাস্তা দিয়ে আরও ১০-১২টি পরিবারের সদস্যরা চলাচল করেন। তবে অন্যরা সবাই সাবের আলীর আত্মীয়-স্বজন। গেটে তালা লাগিয়ে দিলে কেবল তারাই যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন অন্য ৫টি পরিবার। আর সেটি করতেই আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও রাস্তার ওপরে গেট নির্মাণ করে দিয়েছেন প্রভাবশালী সাবের আলীসহ তাঁদের লোকজন।’
ভুক্তভোগী মামুন রেজা বলেন, ‘এই রাস্তাটি এর আগেও কয়েকবার গেট নির্মাণ করে বন্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী সদর সহকারী জজ আদালতে ১৯৯৬ সালে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় আদালত রায় দিয়েছেন রাস্তার ওপর কোনো গেট নির্মাণ করা যাবে না। সর্বসাধারণের জন্য চলাচলে উন্মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করে এতোদিন পরে এসে আবারও ওই প্রভাবশালীরা জোর করে রাস্তা দখল করে গেট নির্মাণ করেছেন। এতে ৫টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।’
আরেক ভূক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় অর্ধেক মাটি আমাদের ছাড়া আছে তার পরেও আমাদেরকে এই রাস্তায় চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করতে গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। গেটটিতে তালা দিয়ে দিলেই আমরা আর বাড়ির বাইরে বের হতে পারব না। গেটের ওপর দিয়ে মই দিয়ে চলাচল করতে হবে। অথবা বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে স্থানীয়দের চাপেরমুখে এখন আপাতত তালা মারেনি ওই প্রভাবশালীরা।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার সাবের আলীকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর চাচাতো ভাই সাহিদ আলী বলেন, ‘এই রাস্তার জমি আমাদের। তাই আমাদের পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দিতে আমরা সবাই মিলে গেট নির্মাণ করেছি। অন্য যেসব পরিবার আছে, তারাও চলাচল করতে পারবে। কাউকে তো বাধা দেওয়া হচ্ছে না।’
বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ওই রাস্তায় গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। যারা করেছেন, সেটি অন্যায় করেছেন। কিন্তু আমাদের এখানে কিছু করার নাই। তবে কাউকে চলাচলে বাধা দেওয়া হলে পুলিশ অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব মশিহুর রহমান বলেন, ‘রাস্তাটি এখন সিটি করপোরেশনের। কিন্তু সেখানে কেউ গেট নির্মাণ করেছে কিনা জানি না। তার পরেও অভিযোগ পেয়ে লোক পাঠিয়েছি। সোমবার অফিস খুললে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তি ব্যবস্থা নিব।’
Leave a Reply