বরাবরই ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যানজটের খবর পাওয়া যায়। এতে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পরেন যাত্রীরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরে দেশের ৫টি মহাসড়কে যানজট হতে পারে। মহাসড়কের এমন ১৫৯টি সম্ভাব্য স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। যানজটের আশঙ্কায় জননিরাপত্তা বিভাগ এসব স্পটে ঈদের আগে ও পরে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে।
রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত হওয়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সড়ক/মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথের যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা থেকে এসব বিষয় জানা যায়।
সভার শুরুতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ঈদে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায় এবং ৩০ লাখের মতো মানুষ ঢাকায় আসে। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদ আনন্দের যাতায়াত নানা কারণে নিরানন্দের হয়ে যায়। সবচেয়ে খারাপ হয় যখন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। রেলেও মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা হয়। যারা ঈদ আনন্দ করতে পরিবার নিয়ে যাতায়াত করেন, তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতেই আজকের এই সভা।
এর মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের বিষয়ে বেশি আশঙ্কা করা হয়। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দ আছে। এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাজার বসে যানজট সৃষ্টি হয়। লালমনিরহাট-বুড়িমারী দুই লেনের সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঈদের আগে মেরামত না করলে যান চলাচল থমকে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসকরা।
মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনায় উঠলে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবে। তবে আমরা দেখেছি ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার। আর কিছু জায়গায় যানজট হতে পারে, সেগুলো আমরা দেখব।
এমন সময় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ভুলতা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। এছাড়া সড়কের যে-সব জায়গায় খানাখন্দ বা খারাপ আছে সেগুলো ঈদের আগেই মেরামত কাজ শেষ হয়ে যাবে। ঈদের আগে সড়ক ঠিক হয়ে যাবে। আগামী ২০ তারিখের মধ্যেই এলেঙ্গা-রংপুর ফোর লেন খুলে দেওয়া হবে।
পরে সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আগামী ১৫ রোজার মধ্যে সব রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।
এরপর কথা উঠে ঢাকা থাকা বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে পকেটমার, চুরি, মলম পার্টি নিয়ে। পরে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনার নির্দেশ দেন। এজন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে একজন করে প্রতিনিধি, বিআরটিএর এক জন প্রতিনিধি ও ডিএমপির একজন প্রতিনিধি নিয়ে মোট ৪ জনের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। সিসিটিভি সিস্টেম ও সার্চ লাইট বসাতে কি কি ব্যবস্থা নিতে হবে, তা আজকের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
পরে আলোচনা হয়ে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি নিয়ে। সভায় বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয়— ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। বিশেষ করে প্রবাসীদের গাড়িগুলো বেশি ডাকাতির কবলে পরে। এছাড়া বাসে ভাড়া বেশি রাখা হয় ঈদের আগে। এ বিষয়ে সড়ক উপদেষ্টার নির্দেশ চাওয়া হয়।
এমন সময় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা একটা অ্যাপ তৈরি করেছি। সেখানে টহল গাড়িগুলো কোথায় আছে, তা দেখা যায়। আমরা এটা মনিটরিং করছি। প্রবাসীদের ২/১টা ঘটনা ঘটেছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বিমানবন্দরে একটি হেল্প ডেস্ক করছি। সেখান থেকে প্রবাসীদের একটি নম্বর দিয়ে দিবো। সেই নম্বরে তারা লাইভ লোকেশন শেয়ার করতে পারবে। এছাড়া যে গাড়িতে সে যাবে, সেই গাড়ি ও চালকের ভিডিও ও মোবাইল নম্বর রেখে দিবো।
বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার বাহিরে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রতিটি টার্মিনালে আমাদের হেল্প ডেস্ক থাকবে। ভাড়ার অভিযোগ থাকলে তাদের কাছে জানাতে হবে। আর আগামী ১৪ মার্চ বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। টিকিটের দাম সরকারি ভাড়ার বেশি হবে না। আমরা নজরদারি রাখবো।
সভায় ২৫-২৮ মার্চ পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে ঈদের আগে সিএনজি স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার বিষয়ও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, টিকিটের কালোবাজারি, ছিনতাই, ডাকাতি, মলম পার্টিসহ যা কিছু আছে তার বিরুদ্ধে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে সরকারি মনিটরিং টিমের সঙ্গে আমরা মালিক-শ্রমিকরা মিলে সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবো।
সভায় বিআরটিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনুপম সাহা বলেন, ঈদের সময় বিশেষ ব্যবস্থায় বাস চালানোর বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে। এবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ৭৭৫টি বাস প্রস্তুত করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে চলাচল করবে ৪৭০টি বাস। বিআরটিসি’র মোট ১২৪৫টি গাড়ি ঈদ স্পেশাল হিসেব কাজ করবে। আগামী ২০ তারিখ থেকে এসব বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
বাংলাদেশ ট্রাক ওনার্স মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের ছুটি যতদিনই হোক, ঈদের ৩ দিন আগে ও পরে পণ্যবাহী ট্রাক ও গার্মেন্টসের এক্সপোর্ট গাড়িগুলো বন্ধ করা হয়। গাড়ি বন্ধ করে দিলে শিপমেন্ট হোঁচট খাবে। এখানে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ আছে। তার এটা ব্যাখ্যা করবেন। তারা পারলে আমরা ৬ দিনই ছুটি কাটাতে পারবো।
আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সভায় আলোচনা করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামসহ সড়ক, রেলওয়ে ও নৌপথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনরা।
Leave a Reply