1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের বাড়তি চাপ ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২২৫ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

বিগত সরকারের আমলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ রাখা হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে, এ দফায় ক্যাপাসিটি চার্জ ভর্তুকির টাকার পরিমাণকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা দেবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়মভিত্তিক একটি অংশের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু বিগত সরকারের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্যাপাসিটি চার্জ এ খাতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ আইনের আওতায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হয় বিদ্যুতের দাম, অপরদিকে বাড়াতে হয় ভর্তুকির পরিমাণ।

কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ নিয়মিত বাড়ানো হলেও বড় অংশই চলে যায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে। যদিও গত দুই বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয়ও অনেক বাড়ানো হয়েছে। ফলে ভর্তুকি ও দাম বৃদ্ধি করেও লোকসান সামাল দিতে পারেনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে বড় অঙ্কের ঘাটতিতে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল মাত্র সাত হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। তবে, ওই অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেই পিডিবিকে গুনতে হয় ১০ হাজার ৯৫৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের অনুপাত ছিল ১৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ হিসাবে ভর্তুকির তুলনায় ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ বেশি গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয় আট হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। যদিও ওই অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে পিডিবিকে গুনতে হয় ১৩ হাজার ২১ কোটি তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের অনুপাত দাঁড়ায় ১৪৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ হিসাবে অর্থবছরটিতে ভর্তুকির তুলনায় ৪৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ অর্থ বেশি গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে করা হয় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে ব্যয় করতে হয় ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের অনুপাত কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১০৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। অর্থাৎ ভর্তুকির তুলনায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের চাপ অনেকটা কমে আসে।

পরবর্তী অর্থবছরে হিসাব অনেকটা পাল্টে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়ে যায়। তবে, ক্যাপাসিটি চার্জ সে তুলনায় কম হারে বাড়ে। ওই অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয় (আদানিসহ) ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ভর্তুকি দেওয়া হয় ২৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকির মাত্র ৬০ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

গত অর্থবছর এ চিত্র আবারও পাল্টে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম দ্রুত কমে যায়। অন্যদিকে, দেশে নতুন নতুন বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতাও বেড়ে যায়। এতে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ এক লাফে ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখে ভারতের আদানি, এসএস পাওয়ার ও রামপালের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ কেন্দ্রগুলো নতুন যুক্ত হওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের হারও বেড়ে যায়।

গত অর্থবছর (২০২৩-২৪) পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে (অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী) ২৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয় বেড়ে যায় ১০ হাজার ১০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকির ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে।

যদিও গত অর্থবছর পুরো ভর্তুকি নগদে দেওয়া হয়নি। নগদে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল ১২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। বাকি ২০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বন্ড আকারে দেওয়া হয়।

dhakapost

চাপ বাড়িয়েছে ডলারে চুক্তি

ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে অত্যধিক ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ডলারে চার্জ পরিশোধের চুক্তি। বিগত অর্থবছরে ডলারের বিনিময় হার অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণও বেড়ে যায়। বর্তমান সময় পর্যন্ত ডলারের দামে তেমন একটা তারতম্য আসেনি। ফলে বাড়তির দিকেই থাকছে চার্জের পরিমাণ।

পিডিবি জানাচ্ছে, দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিদেশি ঋণ না থাকলেও চুক্তি করা হয়েছে ডলারে। ডলারের পরিবর্তে দেশীয় মুদ্রায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হলে এ খাতে ব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।

ক্যাপাসিটি চার্জের ক্ষেত্রে মূলত দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ নন-এসকেলেবল ও অপরটি এসকেলেবল। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ তথা মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয় নন-এসকেলেবল অংশে অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর বাংলাদেশের প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দেশীয় মুদ্রায় ঋণ নেওয়া হয়। তাদের এ ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে দেশীয় মুদ্রায়। তবে, তারা ক্যাপাসিটি চার্জ নিচ্ছে ডলারের রেটে। ফলে এ খাতের বাড়তি অর্থ ঢুকছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পকেটে।

মূলত ২০০৯ সাল থেকে বেশকিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয় সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় ডলারে। যদিও বর্তমানে কুইক রেন্টালের সংখ্যা কমে এসেছে। তারপরও বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোকে ডলারেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের পর বেসরকারি খাতে বড় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। আইপিপি নামক এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারের বিনিময় হার ধরে টাকায় পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ বিনিময় হার যত বাড়ে, ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে ব্যয়ও তত বাড়ে।

গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে (অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী) ২৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয় বেড়ে যায় ১০ হাজার ১০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ভর্তুকির ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে

dhakapost

সরকারের করণীয় কী

ক্যাপাসিটি চার্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচের একটি অংশ হলেও বিগত সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বিষয়টিকে নিয়ে গেছে ভোগান্তির পর্যায়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটি  বাড়তি বোঝা হিসেবে প্রতীয়মান হলেও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তা অনেকটা কমে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন।

তিনি বলেন, এটা সত্য যে বিগত সরকার বিশেষ আইনের ক্ষমতাবলে নিজের ইচ্ছামতো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল, যা ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা বাড়িয়ে দেয়। ক্যাপাসিটি চার্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচের একটি অংশ, কিন্তু অতিরিক্ত চার্জ কোনো সুফল বয়ে আনেনি।

‘যে বিশেষ আইনের অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করা হয়েছিল, আইন অনুযায়ী সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা বা পর্যালোচনার আওতায় নিয়ে আসা একটি সমাধান হতে পারে। এক্ষেত্রে আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটা যদি উঠে আসে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবৈধ ও নীতিবহির্ভূতভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে আর বাড়তি ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা বহন করতে হবে না।’

‘আরেকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তা হলো- নেগোসিয়েশনে যাওয়া। যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে (উৎপাদনে আছে বা নেই) অতিরিক্ত চার্জ দিতে হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ চার্জ কমিয়ে নিয়ে আসা। সরকার যদি চাপ প্রয়োগ করে একটি বোঝাপড়ায় আসতে পারে, তাহলে ক্যাপাসিটি চার্জের বাড়তি অর্থ অনেকটা কমে আসতে পারে।’

এজাজ হোসেন আরও বলেন, চার্জ বাড়ার পেছনে পেমেন্ট সিস্টেমও একটা ফ্যাক্ট। যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ডলারে চুক্তি করেছে, সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। ডলারের রেটে দেশীয় মুদ্রায় পেমেন্ট করে দেওয়া হবে। এটাও চার্জের বোঝা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট