1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

চাকরির প্রলোভনে নারী নির্যাতন, মানব পাচার চক্রের প্রতারণার ফাঁদ
বিদেশে পাঠাতে তিন লাখ ফেরাতেও তিন লাখ

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৪৩৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লোক হলেও মূলত ওরা মানব পাচার চক্রের সদস্য। তাদের টার্গেট বেকার নারী। মধ্যপ্রাচ্যে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিদেশে লোক পাঠায়। সেখানে নিয়ে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ভুক্তভোগী নারীরা যোগাযোগ করেন তাদের স্বজনদের সঙ্গে। কোনো উপায় না দেখে স্বজনরা যোগাযোগ করেন নামধারী সেই রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে।

ভুক্তভোগীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চান। এ সময় চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন। চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন স্বজনদের সঙ্গে।

এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল চক্রের সদস্যরা। এ ধরনের দুটি চক্রের সাত সদস্য ধরা পড়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) জালে।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, এক শ্রেণির ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সির টাকা আয়ের মূল উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী পাচার। প্রতারিত ভিকটিমের স্বজনরা আমাদের কাছে প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ করছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাবের খিলগাঁও ক্যাম্প ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাবের টিকাটুলি ক্যাম্প দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। থানা পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- আব্দুল মালেক (৪৯) ও ফখরুল ইসলাম ফারুক (৪৬)। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাদের গ্রেফতার করা হয় তারা হলেন-নজরুল ইসলাম মিলন (৪২), বাদল আকন (৪০), হেলাল উদ্দিন (৩২), আব্দুর রহমান রিপন (৩৮) ও মাসুদ আলম (২৬)।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ ধরনের চক্রের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাচারকারী বা ভুক্তভোগীর স্বজনরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকিও দেন পাচার চক্রের সদস্যরা।

র‌্যাব টিকাটুলি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার খায়রুল কবির জানান, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কারোরই রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেই। অথচ কয়েক বছর ধরে তারা জনশক্তি রপ্তানির আড়ালে বিদেশে লোক পাচার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। আবার পাচার করা লোককে দেশে ফিরিয়ে আনতে অর্থ আদায় করছিল। তারা ভিকটিমদের কাছ হতে সৌদি আরবে উচ্চ বেতনে চাকরি, বছরে দুটি বোনাস, থাকা-খাওয়া ফ্রিসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে সেখানে জিম্মি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত।

র‌্যাব খিলগাঁও ক্যাম্প জানায়, ১৩ ফেব্রুয়ারি যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে দশটি মোবাইল ফোন, আটটি এটিএম কার্ড, তিনটি স্ট্যাম্প এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিকটিমদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। এরপর বিদেশে তাদের সহযোগীরা টর্চারসেলে নিয়ে নির্যাতন চালায় চাকরিপ্রার্থীদের। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে এবং নিরাপদে দেশে ফিরতে ভুক্তভোগীরা স্বজনদের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য হন।

র‌্যাব জানায়, দুটি ঘটনায় সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া সাতজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত রিপন তার প্রতিবেশী এক তরুণীকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সৌদিতে পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি পল্টনে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে নেওয়া হয় তরুণীকে। বলা হয়, তাকে গৃহকর্মীর ভিসা দেওয়া হবে।

ওই বছরের ৪ অক্টোবর স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয় ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যদের। তাতে লেখা হয়, ‘তরুণী দুই বছরের মধ্যে দেশে ফিরবে না। তাকে পাঠাতে খরচ হবে তিন লাখ টাকা।’ পরে ওই বছরের ১৯ অক্টোবর বিকালে তাকে সৌদি আরব পাঠানো হয়।

কিন্তু এর ১৫ দিনের মধ্যে ভিকটিম তার পরিবারকে ফোন করে জানায়, ‘সে প্রতিশ্রুত চাকরি পায়নি। নিয়োগকর্তা তাকে নির্যাতন করছেন। যদি তিনি বাড়ি ফিরতে না পারেন তাহলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

এর পর থেকেই তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বজনরা ওই রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে গেলে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। এক লাখ টাকা দেওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি তার ভিকটিমের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এরপর ভিকটিমের স্বজনদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এজেন্সি। পরে বিষয়টি র‌্যাবকে জানানো হয়।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট