জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনের মতো গত ২১ জুলাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন চালক ওবায়দুল ইসলাম (৩৯)। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানান পথচারী দুই যুবক। তিনি রাজি হলে, গুলিবিদ্ধ কিশোরকে অটোরিকশায় তোলার সময় মুখ দেখে চমকে ওঠেন ওবায়দুল। গুলিবিদ্ধ কিশোরকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকার করে ওবায়দুল বলেন, ‘এ তো আমার ছেলে’। এ সময় তার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা। ভিড় করেন শত শত মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওবায়দুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম একমাত্র ছেলে আমিনকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়ায় নতুন এ কে স্কুল রোডের একটি টিনশেডের বাসায় ভাড়া থাকতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে পড়াশোনা থেমে যায় আমিনের। পরে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকার ‘ওয়ান টাচ’ নামের একটা বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরির কারখানায় গত ৪ বছর ধরে কাজ করত।
ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমিনকে রিকশায় তোলার সময় আমি চিনে ফেলি, এটা যে আমারই কলিজার টুকরা।
দাদি লাভলী বেগম আমিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার এই নাতি ওর দাদার নাহান নিচের দিকে তাকাইয়া হাঁটত। আমার অনেক শখের নাতি, এই নাতি আমি কোম্মে পামু! আমি আমিনের ছবি দেখতে পারি না, দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমার ছেলের আশাভরসা সব শেষ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার নাতির হত্যার বিচার চাই।’
এ সময় সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানান তিনি।
আমিনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা বাউফল উপজেলার সকল নিহতের তথ্য সেখানে পাঠিয়েছি। নিহতের পরিবার যাতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পায় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
Leave a Reply