দেশের সবচেয়ে সুন্দর ও পরিস্কার পরিছন্ন নগরী রাজশাহীতে বসেছে শীতকালীন শাকের হাট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে কেটে-ধুয়ে রাখা হরেক রকমের শাক। পদ্মা নদীর বাঁধ ঘেঁষা রাজশাহীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে শীতের বিকেলে ফুটপাতজুড়ে বসে এই হাট। লোকসমাগম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে ওঠে শাক কাটাকুটির এক ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা।
সড়কের একাধারে পলিথিন বিছিয়ে ধারালো হাসুয়া নিয়ে পাশের ঝুড়িতে রাখা পদ্মার জেগে ওঠা চর থেকে নিয়ে আশা খেসারি, বথুয়া, সাঞ্ছি, বুট, শর্ষেসহ নানান পদের শীতকালীন তরতাজা শাক ক্রেতাদের সামনেই কেটে ধুয়ে রান্নার উপযোগী করে বিক্রি করছেন গ্রামীণ নারীরা ।
আর এই শাক কমবেশি সবারই খুব প্রিয়। তাইতো একটু বাড়তি দাম দিয়ে হলেও কিনছেন ইচ্ছেমেত। এখানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি শাক বিক্রে হচ্ছে ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। কুচি করে কেটে পরিবেশনের জন্য মজুরি বাবদ ২০ টাকা বাড়তি রেখে সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয় ৮০ থেকে ১৪০ টাকা ।
এদিকে, ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনের মানুষরা একটু সময় কাটানোর জন্য আসছেন সিঅ্যান্ডবিতে, বাড়ি ফেরার সময় হাতে করে নিয়ে যাচ্ছেন কেটে ধুয়ে রাখা এসব শাক। কারণ বিভিন্ন ধরনের শাক খাওয়াটা যে বাঙালির এক আদি খাদ্যাভ্যাস। আর এই শীতের সতেজ শাকসবজির স্বাদই অন্য রকম। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় শাকপাতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী ও পুষ্টিকর।
রেডিমেড এই শাক কিনতে আশা এক কর্মজীবী মহিলা বলেন, শাক রান্নার চেয়ে কাটা-বাছাই বেশি কষ্টকর। তাই মন চাইলেও শাক কিনতে পারিনা। তবে এখানে টাটকা শাক কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, এরজন্য নিলাম। এগুলো এখন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কেবল তেল, মসলা দিয়ে রান্না করলেই হয়ে যাবে।
শাক বিক্রেতা মলি বেগম তার শাক বিক্রির গল্প শোনাতে গিয়ে বলেন, শাক কমবেশি সকলেরই পছন্দের খাবার। কিন্তু কাটা-বাছার কারণে অনেকেই তা কিনতে চান না। তাদের কথা চিন্তাকরেই মূলত কেটে-বেছে এইভাবে শাক বিক্রী শুরু করি । প্রথম দিকে তুলে এনে বিক্রি করতাম। এরপর স্থানীয় কয়েকজনের পরামর্শে গতবছর থেকে শাক এনে তা বেছে-ধুয়ে-কেটে বিক্রি শুরু করি।
শহরের দক্ষিণ দিয়ে বাহিত পদ্মা নদীর চর থেকে নিয়ে আশা এসব শাক বিক্রি করেই তারা হচ্ছেন সাবলম্বী। ছোট্ট ব্যবসার লাভের অংশই তাদের নিত্যদিনের সংসারে সামান্য শাক-ভাতের জন্য যথেষ্ট। আর এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে চরের পিছিয়ে পড়া নারীরা।
Leave a Reply