1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ অপরাহ্ন

যেসব কারণে এবার শীত বেশি

আবহাওয়া রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১২৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

এ মৌসুমে হাড়ে কাঁপন ধরাচ্ছে শীত। এমন শীত এর আগে দেখেননি। এর পরও রুটি-রুজির প্রয়োজনে প্রতিদিন ভোরেই ঘর ছেড়ে বের হতে হয়। শীতের কারণে আয়-ইনকামও কমে গেছে। এত শীতের মধ্যে মানুষ কাজ ছাড়া বের হতে চায় না, বলছিলেন অটোরিকশা চালক মাহবুবুর রহমান।

তার মতো অনেকের বলছিলেন এ বছর শীত বেশি পড়ছে। কেউ কেউ একে অস্বাভাবিকও বলছেন। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ভিন্ন কথা। প্রতিষ্ঠানটির হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে।

ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সেবছর সারাদেশে দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও দেখা গিয়েছিল। সেখানে এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো জেলাতেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, খাতা-কলমে তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও বেশ কিছু কারণে এবার শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।

দীর্ঘ সময়ের কুয়াশা

যেসব কারণে বাংলাদেশে এ বছর শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দীর্ঘ সময় ধরে ঘন কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এবার কুয়াশা তৈরির প্রবণতা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। আর এই দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে এসেছে। অর্থাৎ সূর্য বেশিক্ষণ আলো দিতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায় বলেন তিনি।

এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ বছর দিনের তাপমাত্রা দুই থেকে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারির পর থেকে এটি বেশ কমে এসেছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।

তিনি বলেন, বস্তুতঃ কোনো অঞ্চলের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। আর পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, তাহলে সেখানে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয় বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, তেতুলিয়ার মতো উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। এছাড়া ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম দেখা গেছে।

গত ১৫ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বোনিম্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ দিন তাপমাত্রার ব্যবধান পাঁচ ডিগ্রীর নেচে ছিল।

কুয়াশা বাড়ছে কেন?

বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে সম্প্রতি বেশ কয়েকবারই ঢাকাকে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় দেখা গেছে। যানবাহন, ইটভাটা ও শিল্প-কারখানার দূষিত ধোঁয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানান কারণে সারাদেশেই আগের চেয়ে বায়ু দূষণ বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে।

এর মধ্যেই আবার জানুয়ারি মাসে দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দূষিত বায়ু প্রবেশের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দূষিত এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে রয়েছে, যা মেঘ ও কুয়াশা তৈরিতে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে বলেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

গত দুই সপ্তাহে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের বেশি কিছু এলাকায় বিকেল পর্যন্ত কুয়াশা দেখা গেছে। এছাড়া কোথাও কোথাও কুয়াশা বেশি থাকায় সারাদিনে একবারও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি বলে জানা গেছে।

হিমালয়ের বাতাস

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তথা বাতাসের চাপ বেশি থাকার কারণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শীতের ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে বলে জানান আবুল কালাম মল্লিক।

যেহেতু পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ পশ্চিবঙ্গজুড়ে উচ্চচাপ বলয় সক্রিয় আছে, ফলে বায়ুচাপ বাংলাদেশের দিকে প্রবেশ করছে। বাতাসের গতিবেগ তুলনামূলকভাবে একটু বেশি থাকার কারণে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনার ওপরের দিকে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা- এসব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, বলেন এই আবহাওয়াবিদ।

এছাড়াও ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন বাতাস কখনো নিচে নেমে আসছে, কখনো উপরে উঠে যাচ্ছে। এর ফলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবুল কালাম মল্লিক। চলতি মাসের পুরোটা জুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহ

এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। এর মধ্যে আবার শুরু হতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে।

শুক্রবার নাগাদ ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই সময়ে তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া রাতে সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা আট থেকে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

এছাড়া ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

চুয়াডাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ, ঈশ্বরদীসহ অল্প কয়েকটি জেলায় এবছর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা গেলেও সেটি তীব্র আকার ধারণ করেনি। তবে জানুয়ারির শেষের দিকে সারাদেশে মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট