ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শততম দিনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। টানা প্রায় ১০০ দিন ধরে চলা এই হামলায় ২৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ ১০০ দিনের মাইলফলক অতিক্রমের কাছাকাছি হওয়ায় এবং ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।
কুয়ালালামপুর থেকে আল জাজিরার ফ্লোরেন্স লুই বলেছেন, ‘আমরা এখানে এমন লোকদের সাথে কথা বলেছি যারা ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে বিক্ষোভে এসেছেন। এছাড়া লোকেরা প্ল্যাকার্ডও সাথে এনেছিলেন, যাতে লেখা ছিল: ‘গণহত্যা বন্ধ করুন’, সেইসাথে ‘শিশুদের বোমা মারা আত্মরক্ষা নয়’ বলেও লেখা ছিল।
এর আগে গত মাসে, মালয়েশিয়ার সরকার জানায়, তারা এখন থেকে আর মালয়েশিয়ার বন্দরে ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজগুলোকে ডক করার অনুমতি দেবে না। মালয়েশীয় সরকার সেসময় আরও জানায়, ইসরায়েল অভিমুখে যাওয়া কোনও জাহাজকেই মালয়েশিয়ার কোনও বন্দরে পণ্য আনলোড করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
মালয়েশিয়ায় এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও আন্দোলন কয়েক ডজন এনজিওর সহযোগিতায় সংগঠিত হয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় যে নৃশংসতা চলছে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাই কেবল তাদের লক্ষ্য নয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের ইতিহাস সম্পর্কেও মানুষকে জানাচ্ছেন তারা।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের বাইরেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে শনিবার বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের সময় তারা ইন্দোনেশিয়ান এবং ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ান এবং হাতে রাখা প্ল্যাকার্ডে ‘ইসরায়েলকে বয়কট করো’ এবং ‘এখনই যুদ্ধবিরতি করো’ লেখা ছিল।
এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। আল জাজিরার ফাহমিদা মিলার বলেছেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের মধ্যে অনেকেই গাজায় সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন। কারণ এই দেশটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলকে হাজার হাজার টন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, আর সেগুলোই কার্যত ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর বোমাবর্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফাহমিদা মিলার বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার কারণে এই প্রতিবাদ আরও জোরদার হয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট, স্যাংকশান আন্দোলনের নেতা রোশান দাদু বলেছেন: ‘গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকব।’
এদিকে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা, বার্লিন, আম্মান এবং ওয়াশিংটন ডিসি-সহ বিশ্বের বহু দেশের রাজধানীতে বিশাল সমাবেশ হয়েছে।
লন্ডনে বিক্ষোভ-মিছিলে যোগদানকারী প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্টের সদস্য জিনাইন হুরানি বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা গাজায় অবিচারের জন্য ক্ষুব্ধ এবং ফিলিস্তিনি অধিকারের জন্য বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, রাগ এবং হতাশার কারণে মানুষ রাস্তায় নামছেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে আমরা প্রতি সপ্তাহে রাস্তায় নামছি।
হুরানি বলেন, ব্রিটিশ জনগণ গাজায় যুদ্ধবিরতিকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করলেও ‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদরা গণহত্যাকে অর্থায়ন ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় নামতে থাকব, চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখব।’
এদিকে প্রায় ১৭০০ পুলিশে কর্মকর্তা লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন বলে মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে গাজার সাথে সংহতি প্রদর্শনকারী বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তারা যুদ্ধবিরতি এবং ইয়েমেনে মার্কিন ক্রমবর্ধমান হামলা বন্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন।
আল জাজিরার সংবাদদাতা কিম্বার্লি হ্যালকেট ওয়াশিংটন ডিসি থেকে জানিয়েছেন, ‘আমরা নভেম্বরে মনে রাখব,’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তার ভাষায়, ‘এখানে প্রচুর ক্ষুব্ধ মানুষ তাদের কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন। আর অবশ্যই এটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য শুভ হবে না।’
এছাড়া শনিবার বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো ভারতে হায়দ্রাবাদ শহরে এবং শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর কোল্লুপিটিয়া এলাকায়ও ছোট বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Leave a Reply