বাবা মারা যাওয়ার কৃষিকাজ করে উপার্জন করা ৬৩হাজার টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে চারটি শংকর জাতের গাভী কিনেছিল শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার উত্তরপাড়া গ্রামের এসএম আইনুল হক। বর্তমানে এখন ৩৫টি গরুর মালিক তিনি।
আইনুল বিহার উত্তরপাড়া গ্রামের মৃতঃ আজিজার রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে। বড় ভাই আতিকুর রহমান রেজার অনুপ্রেরণায় তিনি এ খামার গড়ে তোলেন। মেঝো ভাই নাহিদ পল্লী প্রাণী চিকিৎসক হওয়ায় গরু পালনের তার অনেক সুবিধা হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সহযোগীতা ও নিজ চেষ্টায় আইনুল আস্তে আস্তে লাভজনক খামারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। আর ওই খামার থেকে প্রতিদিন ৮টি গাভীর থেকে ১৫০-১৬০ লিটার দুধ বিক্রি করেন।প্রতিদিন দুধ বিক্রি হয় ৮হাজার টাকায়। এছাড়াও বছরে ৮টি বাছুর বিক্রি করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা।
বর্তমানে বছরে গরুর খামার থেকে তার আয় হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এই খামারের টাকা দিয়েই কিনেছেন তিন বিঘা ধানি জমি। আইনুল উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ৩০জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলেন বিহার দুগ্ধ উৎপাদন সমিতি। এই সমিতির মাধ্যমে বছরে ২বার ভ্যাকসিন ফ্রি পায় সমিতির সদস্যরা। এছাড়াও তাদের বিভিন্ন ভর্তুকির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
৩০জন সদস্যদের রয়েছে গরুর খামার। আইনুলকে দেখেই বাকি সদস্যরা গরুর খামার করার জন্য অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাবলম্বীও হয়েছেন তারা। দুধ বিক্রির টাকায় চলে তাদের পরিবার। বর্তমানে দুগ্ধপল্লিতে পরিণত হয়েছে এ গ্রামটি।
তার মরহুম বাবা ছিলেন পোস্ট মাস্টার। বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে ফার্মের নাম দিয়েছেন পোস্ট মাস্টার ফার্ম। ২০২১ সালে গাভী পালনে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পুরুস্কার। এছাড়াও খামারি হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আইনুলের কাঁধে। প্রথমে তিনটি গরুর থেকে ৩টি বাচ্চা হয়। একটি ষাঁড় বাচ্চা বিক্রি করে গরুর ঘর তৈরি করা হয়। আর দুইটি বকনা বাচ্ছা থেকেই আমার সফলতা। আইনুল স্বপ্ন দেখতেন একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। তার বাবার মৃত্যুর পরে ভেঙ্গে যায় সেই স্বপ্ন। এক পর্যায়ে সংসারের হাল ধরতে হয় আইনুলকে। তারপর আইনুল বাণিজ্যিক খামারের যাত্রা। প্রতিবছর গাভীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বড় হতে থাকে খামারের পরিসর। মায়ের দোয়া নিয়ে আমিরুল বড় খামারি। তার খামারের জমির পরিমান এখন ১০শতাংশ। শনিবার (১এপ্রিল) সকালে উপজেলার বিহার উত্তরপাড়ার সফল পোস্ট মাস্টার ডেইরি ফার্মেও মালিক আইনুল আবেগআপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন।
সফল খামারি হিসাবে গর্ববোধ করে আইনুল বলেন, ‘ আমি কৃষক পরিবারের ছেলে, একটা সময় আমাদের ঘরে বেশ অভাব! তখন আমরা কয়েক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতাম। আমি মনে করি, কারো লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে আর পরিশ্রম যদি করা যায় তাহলে সফলতা আসবেই। মা-বাবার দোয়া আর নিজের পরিশ্রম ঠিকই তার সন্তানকে সার্থক করে। গবাদি পশু পালন করে নিজেকে গর্বিত মনে করি।’
আইনুল আরও বলেন, এখন গরুর দুধের মুল্যের চেয়ে খাদ্যশস্যের বাজার বেশ চড়া তাই গরু পালন করতে হলে ঘাস লাগবে। তাই আমি তিন বিঘা জমিতে নিজেই ঘাস লাগিয়েছি। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুধ নিতে মাঝে মধ্যে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন এই অঞ্চলে।
আইনুলের স্বপ্নঃ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার উত্তরপাড়া একটি প্রত্যন্ত গ্রামের সফল গরু খামারি আইনুল স্বপ্ন দেখেন যে, গোটা ইউনিয়নকে তিনি দেশীয় দুগ্ধ পল্লী হিসাবে রোলমডেল করবেন। এই অঞ্চলের দুধ দিয়ে এই অঞ্চলে মিষ্টিজাতপণ্য তৈরি করা গেলে এই অঞ্চলের খামারিরা লাভবান হবে। তাই প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল বলেন, বিহার ইউনিয়নে এখন যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়, সে পরিমাণ দুধ বিক্রির জায়গা নেই। সরকারিভাবে এই অঞ্চলে একটি দুগ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা গেলে বিহার উত্তরপাড়া একটি মডেল রূপান্তরিত হবে। আগামীতে এলডিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বিহার এলাকায় চিলিং সেন্টার স্থাপন করার কার্যক্রম চলেছে। প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে খামারীদের দুগ্ধ উৎপাদনে সার্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান করে আসছে। আমরা খামারীদের পাশে থেকে প্রাণিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছি।
Leave a Reply