নারীরা সমাজের বোঝা নয় বরং কঠোর পরিশ্রম তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। তারই দৃষ্টান্ত নেত্রকোনা দুগার্পুরে সুমেশ্বরীর বিজয়পুর ঘাটে ৩৫ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে জীবন জীবিকা অর্জন করছেন ৫০ বছর বয়সী নারী নাজমা খাতুন।
নেত্রকোনা জেলার দুগার্পুর উপজেলা ভারত সীমান্ত ঘেষা বিজয়পুর গ্রামের সুমেশ্বরী নদীর তীরের আব্দুর রশীদের স্ত্রী নাজমা খাতুন। স্বামী সুমেশ্বরী নদীর বুকে নৌকা চালিয়ে জীবিকা অর্জন করতেন।
তাদের সংসারে তার দুই ছেলে এক মেয়ে, স্বামী নিয়ে বেশ ভালোই চলছিলো তার সুখের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় নাজমার।
ছেলে দুইটি মারা যায় আর এক মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেন। সুমেশ্বরী নদী ভাঙ্গনে নিয়ে যায় জমি ভিঠা। হঠাৎ একদিন স্বামী অসুস্থ হয়ে যায় সংসারে নেমে আসে সীমাহীন অভাব। এ অভাবের কারণে নারী হয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে দুগার্পুরের বিজয়পুর এলাকার নাজমা খাতুন। অসুস্থ স্বামীর বরণ পোষণ এবং নিজেকে বেচে থাকার তাগিদে প্রতিদিন ভোর বেলায় বৈঠা হাতে নিয়ে বের হন বিজয়পুর সুমেশ্বরীর নদীর তীরে বিজয়পুর ঘাটে।
বিজয়পুরে আগত ভ্রমণ পিপাসু দর্শনাথীদের নিয়ে পার হন নদীর এপার থেকে ওপার। ভ্রমণ পিপাসুরা তার নৌকায় উঠে দুর্গাপুরের সুমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য় উপভোগ করেন, সারাদিনের পারিশ্রমিক নিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরেন নাজমা।
নাজমা খাতুন বলেন, যতদিন শক্তি সামর্থ্য আছে ততদিনই এ কাজ করে যাবো। দুটি সোনার টুকরা ছেলে ছিল তাদের অকালে চলে গেল আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে। আমার স্বামী অসুস্থ মানুষ তার জন্যই কষ্ট করে যাচ্ছি, দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত এ ঘাটে নৌকা চালাচ্ছি। যদি সরকারি কোনো সহযোগিতা পাই বাকি জীবনটা একটু সুখে যাবে।
ভ্রমণে আসা তনময় আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এমন একজন নারীর নদীকেন্দ্রীক ব্যতিক্রমী পেশা গড়ে উঠা সত্যিই বড় প্রসংসার। তার জীবন থেকে অনেকেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত।
নেত্রকোনা মহিলা অধিদপ্তরের মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক নাজনীন সুলতানা বলেন, নারী হয়ে সে নৌকা চালিয়ে জীবিকা অর্জন করে সত্যিই সে প্রসংসার দাবীদার। সে যদি সহযোগিতা চায় আমরা মহিলা পরিষদ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো বলে জানান এই নারী কর্মকর্তা।
Leave a Reply