মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের জের ধরে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর আগামী বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচ প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি অনেক দিন শান্ত থাকার পর গত রোববার রাত ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা গেছে এপারে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই থেকে তিনদিন লড়াইয়ের পর বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলে নেয় বিদ্রোহীরা। এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে উখিয়া ও টেকনাফের দিকে।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের সীমান্ত পরিস্থিতি ৮ থেকে ১০ দিন শান্ত ছিল। গত সোমবার গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক।
একই পরিস্থিতি জানিয়ে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদ আনোয়ারী জানান, কয়েকদিন সীমান্ত পরিস্থিতি ভালো ছিল। এখন মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের কারণে এপারে মাঝে মধ্যে গোলাগুলি ও বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুপ্রবেশকালে তিন দফায় ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জলপাইতলী গ্রামে। এতে একজন বাংলাদেশি নারী ও একজন রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হন। ওইদিন নিরাপত্তা বিবেচনা করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আগামী বুধবার থেকে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply