জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিরাপত্তা দল বাদ দিয়ে ২০-২৫ জনের সফরসঙ্গী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক যাবেন তিনি। আর এটি ড. ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে।
ঢাকার এক কূটনীতিক জানান, নিরাপত্তাদল বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০-২৫ জনের মতো সফরসঙ্গী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিউইয়র্ক যাবেন। প্রতিনিধিদলের সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে ২০-২৫ জনের বেশিও হবে না। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ৭ জন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে সশরীরে যোগ দেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় প্রতি অধিবেশনে সরকারপ্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে প্রতি বারই নিউইয়র্ক নিয়ে যেতেন বিশাল বহর। এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন টানা চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পর ড. ইউনূস প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। অতীতের গতানুগতিক প্রথা ভেঙে এবারের অধিবেশনে স্বল্প সংখ্যক প্রতিনিধিদল যাওয়ার সিদ্ধান্তকে চমক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের ৭৯তম অধিবেশন আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তৃতা দেবেন ড. ইউনূস। তিনি তার বক্তৃতায় যুবকদের প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবেন।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, ড. ইউনূস জাতিসংঘে তার দেওয়া ভাষণে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করবেন। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের চাওয়া তুলে ধরবেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটসহ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে তার সরকারের ভাবনা তুলে ধরবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফর নিয়ে এখন কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। আশা করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টার সব কর্মসূচি চলতি মাসের মাঝামাঝিতে চূড়ান্ত হবে।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা বৈঠক করবেন। এর মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডিসহ আরও অনেক সংস্থা প্রধান রয়েছেন।
এ কূটনীতিক বলেন, অনেক সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। আমাদের চেষ্টা রয়েছে, হাইপ্রোফাইল সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বসার। এখনও কার কার সঙ্গে হবে, সেটি চূড়ান্ত নয়। দেখা যায়, অনেক দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান আসেন না। এটা নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত হতে একটু সময় লাগবে। তবে অপ্রয়োজনীয় কোনো এনগেজমেন্ট হবে না।
জানা গেছে, জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কে এক সংবর্ধনার আয়োজন করছে ঢাকা। সেখানে বিভিন্ন সরকার, রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এছাড়া নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি সাইড ইভেন্টের আয়োজন করছে বাংলাদেশ। সফরসঙ্গীদের নিয়ে ড. ইউনূসের ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
Leave a Reply