চিনি-ফিটকিরি ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশিয়ে খুলনার একটি বাড়িতেই তৈরি হতো সুন্দরবনের খাঁটি মধু।
সাতক্ষীরা শ্যামনগরের মাথুরাপুর এলাকার মো. আশরাফুল ইসলাম রিপন (৩৪) ও শ্যামনগরের বাদঘাটা এলাকার শেখ শাহরিয়ার মাসুদ (৩৮) এ কাজটি করতেন।
অবশেষে ১০৫ কেজি ভেজাল মধুসহ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মহানগরীর আড়ংঘাটার সিটি বাইপাস সড়কের ভেজাল মধু তৈরির কারখানা থেকে তাদেরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। তাদের আটকের পর মধুর নামে সাধারণ মানুষ কী খাচ্ছে, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে!
অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কদর বেশি। সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের এলাকায় সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নামে চলছে ভেজাল মধুর ব্যবসা। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অতি মুনাফার আশায় সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত মধুতে ভেজাল দিয়ে বাজারে তা উচ্চ দামে বিক্রি করছে। ভেজাল মধু শনাক্ত করার সাধারণত কোনো উপায় না থাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ ক্রেতা সাধারণ তা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। তেমনি দীর্ঘদিন যাবত আটককৃতরা খুলনায় ভেজাল মধু তৈরি করে মানুষের সাঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।
খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ- কমিশনার মো. নুরুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশের একটি টিম আড়ংঘাটা থানাধীন সিটি বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়স্থ এলাকায় একটি কারখানায় নকল ও কথিত মধু (ভেজাল মধু) উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানতে পারে। পরে সোমবার বিকেলে ওই এলাকার বাইতুস শরিফ জামে মসজিদের পূর্ব পাশে জনৈক অপু সাহেবের টিনসেড বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০৫ কেজি ভেজাল মধু এবং ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জামের মধ্যে ছিল- একটি হলুদ রঙের প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামে রক্ষিত ১০ কেজি চিনি সিরা, ফ্রেশ ২ লিটারের পানির বোতলে রক্ষিত জ্বালানো মধু, যাহা রং হিসেবে মধু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সাদা প্লাস্টিকের কৌটায় রক্ষিত ফিটকিরি চূর্ণ, একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় রক্ষিত ১২ কেজি চিনি, একটি প্লাস্টিকের পানির জার, একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের অর্ধেক ড্রাম, যা মধু রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া একটি এক বার্নার বিশিষ্ট গ্যাসের চুলা, একটি গ্যাস সিলিন্ডার, একটি ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র, ১৪টি প্লাস্টিকের তৈরি নীল কর্কযুক্ত সাদা রঙের বোতল, কাঁচের তৈরি বোয়েম ১২টি, সাদা রঙের প্লাস্টিকের তৈরি ছোট কৌটা ২৪টি, সাদা কর্কযুক্ত প্লাস্টিকের ছোট বোতল ৩৬টি, একটি সবুজ রঙের প্লাস্টিকের তৈরি কর্ক (মধু ঢালার পাত্র) এবং কালো জিরা ফুলের মধু লেখা স্টিকার ৫টি।
পুলিশের উপ-কমিশনার মো. নুরুজ্জামান বলেন, অভিযানকালে জানা যায় মো. আশরাফুল ইসলাম রিপন ও শেখ শাহরিয়ার মাসুদ দীর্ঘদিন যাবত ভেজাল মধু উৎপাদন করে আসছিলেন। এই ভেজাল মধু তৈরির জন্য তারা প্রথমে চিনি, ফিটকিরি, কেমিক্যাল গ্লুকোজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুলায় ফুটিয়ে নেয়। তারপর ওই মিশ্রণ ঠান্ডা হলে তাতে মধুর ফ্লেভার আনার জন্য সামান্য পরিমাণ মধু মেশানো হয়। এরপর ওই মিশ্রণ বোতলজাত করে তার গায়ে ‘অর্গানিক বিডি’র লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় সুন্দরবনের খাঁটি মধু। এই মধু তারা অনলাইন এবং অফলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। যা পরবর্তীতে খাঁটি মধু হিসেবে ভোক্তার কাছে যায়। এই মধু জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এতে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
খুলনা মহানগর ডিবি প্রধান জানান, আসামি মো. আশরাফুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে একটি মারামারি মামলা এবং একটি মাদকের মামলা (৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত) রয়েছে এবং অপর আসামি শেখ শাহরিয়ার মাসুদের বিরুদ্ধে একটি মাদকের মামলা রয়েছে।
Leave a Reply