একদিকে মাঠের পারফরম্যান্সে সাম্প্রতিক সময়টা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। অন্যদিকে, দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের দ্বন্দ্বে টালমাটাল অবস্থা। আগে থেকেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই তামিম ইকবাল, চোটের কারণে প্রস্তুতি ম্যাচে নামা হলো না সাকিব আল হাসানেরও। দুজনের অনুপস্থিতিতে টাইগারদের সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় ওপেনিংয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া। লিটন দাস ও তরুণ তানজিদ হাসান তামিমই যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন। এরপর মেহেদী মিরাজ ও মুশফিকুর রহিমরা বাকি কাজ সেরেছেন, ফলে বাংলাদেশ ৭ উইকেটের দাপুটে এক জয় পেয়েছে।
ম্যাচে নামার আগে তামিমের বাদ পড়া নিয়ে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে হাসান মাহমুদ বলেছিলেন, ‘দলের বাইরে কী ঘটছে না ঘটছে, সেটা নিয়ে আমরা ভাবি না। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য আমরা রুটিন মেনে অনুশীলন করি যেন নিজেদের সেরাটা দিতে পারি। ব্যক্তিগতভাবে আমি (তামিমের বাদ পড়া) এটা নিয়ে বেশি ভাবি না, কারণ, আমি এখানে নিজের ভূমিকা পালন করতে এসেছি।’
সেটাই প্রমাণের যেন সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল ক্রিকেটারদের নিবেদনে। বোলিংয়ের পর ব্যাটেও মিরাজকেও প্রবল আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে লঙ্কানদের বিপক্ষে। ৫টি চার ও দুটি চারে তিনি ৬৭ রানের (৬৪ বল) ইনিংস খেলেছেন। আরেক অপরাজিত ব্যাটার মুশফিক করেছেন ৩৫ রান (৪৩ বল)। ফলে বাংলাদেশ ৮ ওভার হাতে রেখেই ৭ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে।
এর আগে আজ (শুক্রবার) দুপুর আড়াইটায় গুয়াহাটিতে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। শুরু থেকেই লঙ্কান ব্যাটাররা টাইগার বোলারদের ওপর বেশ চড়ি ঘুরিয়েছেন। ফলে মাত্র ১৪ ওভারেই তারা দলীয় একশ রানের সংগ্রহ পেয়ে যায়। রানের গতি দেখে মনে হয়েছিল, অনায়াসে-ই তিনশ পার করবে দাসুন শানাকার দল।
এদিন বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন পেসার হাসান মাহমুদ। তিনি আক্রমণে আসলেই যেন বাউন্ডারির নেশা পেয়ে বসত লঙ্কান ব্যাটারদের। লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা ৯.১ ওভারেই ৬৪ রান তোলেন। এরপর হাতের পেশীতে অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন পেরেরা। তার আগে আক্রমণাত্মক মেজাজে এই বাঁ-হাতি ব্যাটার করেন ৩৪ রান (২৪ বল)। এরপর ক্রিজে আসা কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে ওপেনার নিশাঙ্কা জুটি গড়েন ৪০ রানের। মেন্ডিসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম উইকেটের সূচনা করেন নাসুম আহমেদ। নাজমুল হোসেন শান্ত’র হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে এই ডানহাতি ব্যাটার ২০ রান করেন।
সাকিবের অনুপস্থিতিতে ম্যাচে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পুরো ম্যাচজুড়ে তার বলে অস্বস্তিতে ছিলেন লঙ্কান ব্যাটাররা। যে কারণে চাপে পড়ে তাদের উইকেট পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও রানখরায় ভোগা লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা এদিন মাত্র ৩ রানে শরীফুলের বলে ক্যাচ আউট হয়েছেন। এরপর ইনিংস বড় করার চেষ্টা চালান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও দিমুথ করুণারত্নে। করুণারত্নে (১৮ রান) আউট হতেই ২১৮ রানে ৬ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর ডি সিলভার অর্ধশতকের সুবাদে আড়াইশ রান পেরোয় তারা। মাঝে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দুটি রান-আউটে বড় অবদান রাখেন। করুণারত্নকে তিনি আউট করেন সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দিয়ে। এরপর আর কোনো লঙ্কান ব্যাটার বলার মতো রান পাননি। পেরেরা আগেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ায় ৪৯.১ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে ৯ ওভারে ৩৪ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদী। সবচেয়ে সাশ্রয়ী বোলিং করা মিরাজ ১০ ওভারে ৩২ রানে নেন এক উইকেট। এছাড়া শরীফুল, নাসুম ও তানজিম সাকিব একটি করে শিকার করেছেন।
Leave a Reply