আগামী দিনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলার জন্য মানসম্মত শিক্ষাবিস্তারের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
আশার কথা, সরকার কারিগরি শিক্ষাবিস্তারে নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। জানা যায়, উন্নত দেশগুলোও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান অব্যাহত রেখেছে। উন্নত দেশের আদলে দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিত। দেশের কারিগরি শিক্ষা বর্তমানে খুঁড়িয়ে চলছে।
সংকট এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক পদের ৭০ শতাংশই শূন্য আছে। এছাড়া জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য। বিভিন্ন টেকনোলজি ও কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ল্যাবরেটরি না থাকার বিষয়টিও উদ্বেগজনক।
জানা যায়, বিদ্যমান ল্যাবরেটরিগুলোয় পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও অবকাঠামোগত সংকটের কারণে কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থী একত্র করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও কারিগরি শিক্ষার বিভিন্ন কোর্স সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা অর্জন করে দক্ষ কর্মী হওয়ার সুযোগ পাবে।
দেশে সব ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট দূর করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার যৌথ উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করায় দেশে কম রেমিট্যান্স আসছে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কয়েকগুণ বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে হলে শ্রমনির্ভর জনশক্তির পরিবর্তে মেধানির্ভর শ্রমশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
সমাজে এখনো ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে তুলনামূলক কম মেধাবীরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করানোর বিষয়েও বেশি আগ্রহী।
দেশের সর্বত্র গড়ে ওঠা বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অবকাঠামোগত সংকট কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব সংকট দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রদানের সার্বিক মান প্রশ্নবিদ্ধ হলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে যারা সনদ নিয়ে বের হবেন, তাদের দক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের রুগ্ণদশা অপরিবর্তিত থাকলে দেশে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
শ্রমবাজারের সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কারিগরি শিক্ষার কারিকুলামে যথাযথ পরিবর্তন আনার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের শ্রমবাজারের চাহিদা নিরূপণ না করে শিক্ষা খাতের বিকাশ কী ফল দেবে, তা ভেবে দেখতে হবে। দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম।
তাই বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে হচ্ছে। দেশের শিল্পকারখানাগুলোয় যে মানের দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, সেই মানের কর্মী তৈরির জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা না গেলে এ নিয়ে যত পরিকল্পনাই করা হোক, কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে।
Leave a Reply