কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রোববার সকাল ৮টা থেকে দেশজুড়ে ৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এদিকে ময়মনসিংহ-১০ আসনে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা ও ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগে প্রিসাইডিং অফিসারসহ তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। একই অভিযোগে রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনের হাঁড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুহাম্মদ ফরিদ সেখকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ভোটের সার্বিক পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। তবে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম বলে মনে করেছেন তারা।
সকালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মহিলা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্কটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার মার্টিন ডে বলেন, এখনই মন্তব্য করছি না। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সারাদিন পর্যবেক্ষণ শেষে মতামত দেব। ভোটকেন্দ্রে ভোটিং সিস্টেম ভালো। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি যথেষ্ট নয়।
ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, নির্বাচন বিরোধী প্রচারণার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরির পরও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক।
তিনি বলেন, বিএনপির নির্বাচন বিরোধী অপপ্রচার, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টার পরও সারা দেশে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। এটা গণতন্ত্রের জয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশন দিয়েছিল সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। কোথাও কোনো কারচুপি নেই। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, জামালপুর-কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। পুরনো কায়দায় আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির নির্বাচন করছে। যদিও আমাদের বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছিল এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না।
সংসদ নির্বাচনে আজ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে পরে ভোট নেওয়া হবে। এবার ভোট নেওয়া হয়েছে ব্যালট পেপারে।
নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন মোট ১৯৭১ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৪ জন ২৮টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী। বাকি ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। জাতীয় পাটির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন ভোটের মাঠে আছেন।
নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী ভোটার। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। সারা দেশে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি, আর ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
Leave a Reply