বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেওয়া সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড পোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য গঠিত তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ডব্লিউএফপি। যা আগামী মার্চ থেকেই কার্যকর হবে।
জানা গেছে, মার্চের ১ তারিখ থেকে মাসিক সহায়তার পরিমাণ ১৭ শতাংশ কমিয়ে জনপ্রতি ১০ ডলার করে দেওয়া হবে। সংস্থাটি সতর্কতা দিয়েছে, যদি তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে তাহলে এপ্রিল থেকে অর্থের পরিমাণ আরও কমবে।
তবে ওয়ার্ল্ড ফুড পোগ্রামের এমন সিদ্ধান্তের কারণে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা বাড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মিখাইল ফাখরি এবং মিয়ানমারের মানবিক পরিস্থিতি বিষয়ক প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রু।
তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
বিবৃতিতে তারা আরও বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা এখনই খাদ্য সমস্যায় ভুগছেন। এসব রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর হামলায় নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে যেসব শিশু রয়েছে তাদের প্রায় তিন ভাগই অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এ বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ‘এসব সহায়তা কমানোর প্রভাব তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। কারণ শরণার্থীরা পুরোপুরি এর ওপর নির্ভরশীল।’
তারা জানিয়েছেন, নানান সমস্যায় জর্জরিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাল্য বিবাহ এবং শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাগরপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবারই ৬৯ জন রোহিঙ্গা ছোট নৌকায় ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে পৌঁছান।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, দাতারা যেন ‘রোহিঙ্গাদের থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে না নেন।’
সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ পরিচালক ওন্নো ভান মানেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা পরিবার ও শিশুরা এখন ভঙ্গুর অবস্থানে আছেন। তাদের আরও সহায়তা প্রয়োজন। প্রায় পাঁচ বছর আগে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আসলেও আমরা এখনো খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি, বাল্য বিবাহ এবং শিশুশ্রমের কথা শুনতে পাচ্ছি।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে এখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চলছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার সত্যতা পায় এবং বর্তমান জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইংয়সহ পাঁচ সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করে।
Leave a Reply