গত ২০১৮ সালে রাজশাহী সিটি করোপরেশন নির্বাচনের পর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে নগরীতে। এর ফলে নগরীর রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে মসজিদ-মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র সবখানেই পড়েছে উন্নয়নের ছোঁয়া। বলা যায় উন্নয়নের ছোাঁয়া বদলে গেছে পুরো নগরী। জেলার বাইরে থেকে যিনিই এই নগরীতে পা রাখেন, বদলে যাওয়া নগরী দেখে তিনিই বিষ্ময় প্রকাশ করেন। দেশজুড়ে বদলে যাওয়া রাজশাহী নগরীর সুনামও ছড়িয়ে পড়েছে বেশ।পাশাপাশি সুনাম কুড়াচ্ছেন বর্তমান মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ফলে চলতি বছরেই আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র লিটনের বিকল্প হিসেবে যেমন ভাবছেন না নগরবাসী, তেমনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে অপ্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবেই মনে করছেন।
তবে গত ২০২১ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ পাওয়ার পর থেকে সিটি করপোরেশনের প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। আগামী সিটি নির্বাচনে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন কিনা, বা তাঁকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে কিনা এসব নিয়ে এখনো ধোঁয়াসা রয়েছে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝেই। দলের মধ্যে এখন চাউর হয়েছে, মেয়র লিটনকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করা হলেও সিটি নির্বাচনে সরকার দলের প্রধান প্রার্থী হিসেবে মেয়র পরিবার থেকেই আসতে পারে। নগর উন্নয়নে তার অবদানকে সামনে রেখে লিটন পরিবারের বাইরে আপাতত কাউকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিবে না বলেও মনে করছেন দলটির রাজশাহীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। পরেও সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫-৬ জনে।
এদিকে, সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনোই কিছুই ভাবছেন না বিএনপির নেতারা। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচনে তাঁরা যাবেন না বলে গোষণা দিয়েছেন, রাজশাহীতে সেটি বলবত রাখবেন বলেও জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
অন্যদিকে, নানা ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি থেকেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। ফলে এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থীর নাম এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মেয়রপত্নী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং রাজশাহী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদের নাম শোনা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র মতে, সিটি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এএইচএম কায়রুজ্জামান লিটনের অবর্তমানে দলটির অন্যতম প্রার্থী হিসেবে বছর খানেক ধরা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর একটি অশ্লিল ভিডিও বাইরাল হওয়ার পরে অনেকটায় ব্যাকফুটে চলে যান তিনি। দলের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ডাবলু সরকার। ফলে বর্তমানে মেয়র লিটনের বাইরে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনীর নাম এখন আগে-ভাগে রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। শাহীন আক্তার রেনীও ভিতরে ভিতরে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করছেন। সেই সেঙ্গ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আগামী আগস্টে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সেপ্টম্বরের মধ্যে দেশের ৫ সিটি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও তফশিল ঘোষণা না হওয়ায় এখনো প্রকাশ্যে রাজশাহীর কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় নামেননি। তবে নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী সিটি নির্বাচনে আমি অংশ নিতে চাই। বর্তমান মেয়র প্রার্থী না হলে এ নির্বাচনে আমি অংশ নিব। এর জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার র্দীদিনের সম্পর্ক হলেও এখন মহানগরবাসীর জন্য কিছু করতে চাই।’
এদিকে লিটন পরিবারের বাইরে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে সেখানে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিবেন বলে জানিয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী নগরীর যেন উন্নয়ন হয়েছে গত ৫ বছরে, সেই হিসেবে বর্তমান মেয়রের কোনো বিকল্প নাই। আগামী নির্বাচনে তাঁর সিদ্ধান্তই এখানে বড় সিদ্ধান্ত। তিনি নির্বাচনে অংশ না নিলে তাঁর পরিবারের বাইরে দল কাউকে মনোনয়ন দিতে চাইলে আমি মেয়র পদে প্রার্থী হব। সেই লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছি। ’
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভি করেননি।
অপরদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংঠনকি সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদদ লিমন বলেন, ‘বর্তমান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প কোনো প্রার্থী আমরা দেখতে পারছি না। তিনি দলের নীতি-নির্ধারণ পরিষদের সদস্য। আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ না নিলেও তিনিই সিদ্ধান্ত দিবেন এখানে কে নির্বাচনে অংশ নিবে। আমরা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছি।’
জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তারিফ উদ্দিন বলেন, আগামী সিটি নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দেব তবে এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি
মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, আগামী সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমি নিজেই জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করছি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকারের আওতায় হওয়ায় জোটগত ভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নাই। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনের অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অন্যদিকে, সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপদি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচন নিয়ে এখন ভাবছি না। এই সরকারের অধিনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিব না। আগামী সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধিনে হওয়ার ঘোষণা আসার পরেই আমরা অন্য নির্বাচন নিয়ে ভাববো। আমি বা আমাদের সংগঠনের কোনো প্রার্থীও রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। কেউ মাঠেও নামেনি।’
জানতে চাইলে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি জয়ী হওয়ার পরে রাজশাহী নাগরীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে উন্নয়নের মাধ্যমে। এখনো তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। এ প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হলে রাজশাহী নগরী আরো নতুন রূপে রূপ লাভ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী নগরীর প্রতি যে সুদৃষ্টি রেখেছেন, সেটি আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখি। আর সেটি হলে আরো নতুন যে কয়েক বড় প্রকল্প আমরা হাতে নিয়ে রেখেছি, সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। এসব দিক বিবেচনা করে রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগসহ সাধারণ নগরবাসীও আমাকে আগামী নির্বাচনে আবারও মেয়র পদে অংশগ্রহণ করতে চাপ দিচ্ছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবে আমি কাজ করব।
Leave a Reply