1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে গৃহবধূর কাছে ওসির ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৫৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে এক গৃহবধূর কাছে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস হয়েছে। ৫ লাখ টাকা দিয়ে ওই গৃহবধূকে মাদক ব্যবসা করার পরামর্শ দেন ওসি। এছাড়াও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসিকে বদলি করতে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন ওসি মাহবুবুল। আর টাকা না দিলে বড় বিপদে পড়ে যাবেন বলে ওই গৃহবধূকে হুমকিও দেন এই ওসি।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসির কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামের ওই গৃহবধূর কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ওই গৃহবধূ। এ বিষয়ে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগি ওই গৃহবধূ। অভিযোগের অনুলিপি সরাসরি ও ডাক যোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নসহ গণমাধ্যম অফিসে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ড পাঠানো হয়েছে।

গৃহবধূ সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে আছেন। আব্দুল আলিম কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করে। এতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সাহারা বেগম জানিয়েছেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেয় ওসি মাহবুবুল আলম। প্রথমে তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এর পর কথা বলতে শুরু করেন ওসি।

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্দা থেকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনিনা। এরপর চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেয়ার জন্য জেলা ডিবির ওসির সমালচনা করেন তিনি। বলেন, দুই লাখ টাকা দেন কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দিব (ডিবির ওসি আব্দুল আলিম কালুকে গ্রেপ্তার করেছিল)।

এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিল)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার নিচে ছাড়াতে পারবেন না। এরপর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খােেচ্ছ। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কি কি লাগবে ৫ লাখ টাকা… ৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি আমি চেষ্টা করবো। স্যারকে বলেছি এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।

ওসি আরও বলেন, মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দিব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।

জেলা ডিবির ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালচনা করে অডিওতে ওসিকে আরও বলতে শুনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারবো না। কথা সব ভেঙ্গে বলবো না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।

চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুলকে আরও বলতে শোনা যায়, যে জায়গার ক্ষমতা সেখানেই। ৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দিব। আমার সব উপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই উপরে কাজ করবে। অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের সুন্দর চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী র্দীঘদিন যাবত পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করে। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক র‌্যাব-পুলিশ আটক করেছে বহু। এছাড়াও গত নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সাথে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা।

তিনি বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের আনজুর ছেলে মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাইমুদ্দিনের ছেলে সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একই সঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানা গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ওসি মাহবুবুল আলম ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য দেওয়া যায়নি।

রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, আমরা অডিও রেকর্ডসহ একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষ চাওয়ার ঘটনা যদি সত্য হয় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই অডিওর কণ্ঠ ওসির কি না সেটি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট