রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় ৭০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই উদ্বৃত্ত কোরবানির পশুগুলো অনায়াসে বাইরে বিক্রি করা যাবে। তবে কয়েক বছর থেকে গবাদি পশুর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় বেড়েছে লালন-পালনের খরচ। এমন অবস্থায় কোরবানির পশু আমদানির প্রয়োজন নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০২২ সালে কোরবানিতে জবাই হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু। সেই হিসেবে এ বছরও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তারপরও কিছু বাড়তে পারে। তবে রাজশাহী জেলায় কোরবানির উপযোগী পশু রয়েছে ৪ লাখ। এর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। এই পশুগুলো কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পশুগুলো খামার ও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে লালন-পালন করা হয়েছে। মালিকগণ কোরবানিকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করবেন এসব পশু।
গরুর খামারি শরিফুল ইসলাম বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে সাধারণত গ্রাম এলাকার প্রতিটি বাড়িতে গরু, ছাগল লালন পালন করা হয়ে থাকে। কেউ গরু পালন করেন বিক্রি করে কোরবানিতে গরুর ভাগা দেওয়ার জন্য। কেউ বা বাড়িতে ছাগল পালন করেন। তাদের উদ্দেশ বিক্রি করে কোরবানিতে গরুর ভাগ দেওয়ার। আর অনেকেই বাড়িতে পোষা ছাগলই কোরবানি দেয়।
কোরবানিতে বিক্রির জন্য বাড়িতে গরু পালন করছেন রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছর দুই থেকে তিনটি ষাঁড় পালন করেন কোরবানিতে বিক্রির জন্য। এবারও তার গোয়ালে ষাঁড় রয়েছে। বর্তমানে তার দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা। দুই বছর ধরে বাড়িতে পালন করছি গরুটিকে। দুই বছর আগে শুধু ৭১ হাজার টাকায় কিনেছিলাম গরুটি। গত কোরবানিতে বিক্রি করিনি। এবার বিক্রি করবো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থায় বাজারে সাড়ে ৭০০ টাকা কেজি গরুর মাংস। অতীতের তুলনায় সর্বোচ্চ দাম। সেই হিসেবে কোরবানিতে গরুর দাম বেশি হওয়ার কথা। আমরা যে খাবারগুলো গরুকে খেতে দিয়েছি তার সবগুলোরই দাম বেশি আগের তুলনায়। ভারত থেকে গরু আমদানি না করা হলে আশা করছি কোরবানিতে ভালো দাম পাব।
গরুর খামারি আরাফাত রুবেল বলেন, বাংলাদেশিরা দেশি পশু কোরবানি করতে পছন্দ করেন। কোরবানির জায়গা থেকে দেশি গরুর চাহিদা বেশি। গরু পালন করতে এখন প্রচুর খরচ। যেহেতু দেশের লালন পালন করা পশুকে কোরবানি সম্ভব। সেই জায়গা থেকে গরু আমদানি না করা হলে খামারিরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমাদের প্রত্যাশা কোরবানি উপলক্ষ্যে যেনো পশু আমদানি না করা হয়।
গবাদি পশুর খাবার বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, গবাদি পশুর খাবারের দাম বেড়েছে। প্রতি মাসে খাবারের দাম বাড়ছে। ভুট্টার আটা প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, চালের গুড়া (খুদ) ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, অ্যাঙ্কর ভুসি ৬০ টাকা, মসুরের ভুসি ৪৪ টাকা, সরিষার খৈল ৫০ টাকা। এছাড়া ধানের খড় (আউর) ১২০ থেকে ৩১০ টাকা বোঝা।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশুহাট সিটি হাট। এই হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন ডাবলু বলেন, সিটি পশুর হাট সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বসছে। তবে এখনো কোরবানির পশুর কেনাবেচা শুরু হয়নি। কারণ কোরবানির একমাসের মতো সময় রয়েছে। কোরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন হাট দেওয়া হবে। কোরবানির হাট শুরুর আগে মাইকিং করা হবে। হাটে প্রচুর দেশি গরু। ভারত থেকে কোনো পশু হাটে আসে না।
ভেটেরিনারি চিকিৎসক সেলিনা বেগম বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে অনেকেই গরু পালন করেন। কেউ বাড়িতে, কেউ বা খামার করে। তবে তুলনামূলক বাড়িতে বেশি গরু পালন হয়ে থাকে। কোরবানির তিন থেকে চার মাস আগে গরু লালন-পালনকারী বাড়ে। অনেকেই বছরজুড়ে গরু পালন করে থাকেন। তবে কোরবানির এই সময়টায় লালন পালনকারীদের সংখ্যা বেশি থাকে। রাজশাহীতে যারা ছোট পরিসরে কোরবানির জন্য গরু পালন করে থাকেন তাদের গোয়ালে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি গরু থাকে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশু বেশি রয়েছে। এ বছর রাজশাহীতে কোরবানির উপযোগি পশু রয়েছে ৪ লাখ। তবে এর সংখ্যা আরও বারতে পারে। কারণ উপজেলাগুলোর সর্বশেষ তথ্য পেতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে। রাজশাহী জেলায় গত বছর ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু জবাই হয়েছিল। আমরা যদি গত বছরের জবাইকৃত পশু হিসেবে ধরি, সেই হিসেবে ৭০ হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশু আমদানির প্রয়োজন নেই।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, আসন্ন কোরবানির পশুর সঙ্কট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৭৭ কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণের জন্য জেলায় প্রায় ৪ লাখেরও বেশি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। বরং চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার পশুর জোগান বেশি রয়েছে। পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদে গবাদিপশু পালনকারী খামারি ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে।
তিনি বলেন, ভারত থেকে গবাদি পশু আসা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে যাতে কোনো গবাদিপশু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
Leave a Reply