তার মাঝে কেউ পেলে, আবার কেউ রোনালদিনহোর ছায়া খুঁজে পান।
বার্সেলোনা জয় করে ২০১৭ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের তকমা নিয়ে পিএসজিতে খেলছেন নেইমার।
কাড়িকাড়ি অর্থ তার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে। চাকচিক্যময় জীবনযাপন কিংবা পার্টি মুডের ছবি দেখে কেউ হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারবে না, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের এই ‘পোস্টার বয়’-এর প্রথম জীবন মোটেই সহজ ছিল না।
এমনকি মাত্র ৬ মাস বয়সেই এক দুর্ঘটনায় থেমে যেতে পারতো তার প্রাণস্পন্দন।
নেইমারের বেড়ে ওঠেছেন সাওপাওলোর এক যৌথ পরিবারে। পরিবারটির বাস ছিল ছোট এক বাড়িতে। তবে তার জীবনের ওই অধ্যায় সম্পর্কে কমবেশি অনেকে জানলেও, শৈশবের দুর্ঘটনার কথা অনেকটা অজানাই রয়ে গেছে। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘নেইমার: পিতা ও পুত্রের কথোপকথন’-এ নেইমারের বাবা জানিয়েছেন সেই ঘটনার কথা। গাড়ি দুর্ঘটনার পর তিনি এবং স্ত্রী তথা নেইমারের মা নাদিনে ভেবেছিলেন, সন্তানকে চিরজীবনের জন্য হারাতে যাচ্ছেন তারা।
সেই গ্রন্থে নেইমারের মা স্বীকার করেছেন, ‘(দুর্ঘটনার পর) চরম হতাশা এবং অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, জুনিনহোর (নেইমারের পারিবারিক নাম) বদলে যেন আমার প্রাণ কেড়ে নেন। ’
পরে একই বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন নেইমার নিজেও। নেটফ্লিক্সে তার জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে। ‘নেইমার: দ্য পারফেক্ট ক্যাওস’ নামের ওই তথ্যচিত্রে ওই দুর্ঘটনার ব্যাপারে পিএসজি ফরোয়ার্ড বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের সত্যিকারের বিশৃঙ্খলা, কারণ জীবনটাই এমন। মাত্র ছয় মাস বয়সেই আমিসহ আমার বাবা-মা দুর্ঘটনার শিকার হই। সেখান থেকেই বিশৃঙ্খলার শুরু। পরে আমরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, আমার তেমন কিছুই হয়নি। এরপর আমি ফুটবলার হলাম এবং অবশ্যই অনেক আনন্দের মুহূর্ত এলো জীবনে। তবে এখনও আমার জীবনে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে। ’
নেইমারের শৈশব কেটেছে ‘সব থেকেও কিছুই নেই’ অবস্থায়। যে এলাকায় তার পরিবার বাস করতো, সেখানে দিনেদুপুরে মাদক কারবার চলতো। পুরো এলাকা ছিল অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। সেদিনগুলোর কথা স্মরণ করে নেইমার বলেন, ‘আমরা দাদির বাড়িতে বাস করতাম, যেখানে একসঙ্গে আমার চাচা-ফুফু এবং তাদের সন্তানরাও থাকতো। ৩ রুমের বাড়িতে আমরা ৯ জন থাকতাম। আমাদের অনেক সমস্যা ছিল। যখন একজন ঘুমাতে যেত, অন্যজনকে তখন জেগে থাকতে হতো। ’
অবশ্য পরিবারের সঙ্গে সান্তোসে চলে যাওয়ার পর বদলে যায় নেইমারের জীবন। কৈশোরে স্থানীয় ক্লাব পিয়েক্সের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন তিনি। এরপর ১৭ বছর বয়সে প্রথম বিভাগে অভিষেক হয় তার। ওই সময়টার কথা স্মরণ করে নেইমার বলেন, ‘আমার শৈশব কিছুটা কঠিন ছিল। আমাদের প্রচুর টাকা ছিল না, তবে কখনো ক্ষুধার্ত থাকতে হয়নি। আমার বাবা ওই বিষয়টা দেখতেন। আমার অনেক বন্ধুরা যা করতো, আমি পারতাম না; কারণ আমাদের অত টাকা ছিল না। তবে মনে হয় না আমি অসুখী ছিলাম। ’
তবে ক্ষুধার্ত থাকতে না হলেও, একটা বিষয় স্মৃতিতে গেঁথে নিয়েছিলেন নেইমার যে- কিছু জিনিস আছে যা টাকা দিয়ে কেনা অসম্ভব। নেইমার বলেন, ‘‘আমার মনে আছে মাকে বলতাম বিস্কুট খাবো, কিন্তু আমার কাছে কেনার মতো টাকা নেই। সে (নেইমার মা) আমাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতো। আমি তখন বলতাম, ‘একদিন আমি অনেক ধনী হবো এবং আস্ত একটা বিস্কুট ফ্যাক্টরি কিনে নেবো। ‘ এখনও মা আমাকে ওটা নিয়ে দাও বলে এবং কাঁদে…। ’’
সেই ছোট্ট নেইমারের বয়স এখন ৩১ বছর। গতপরশু ছিল জন্মদিন। এবারের জন্মদিনও বেশ ঘটা করে উদযাপন করেছেন তিনি। জীবন কঠিন বাস্তবতার মুখ দেখিয়েছিল বলেই কিনা, উপভোগের মন্ত্র নিয়েই চলেন নেইমার। সেই আর্থিক সমস্যাও অনেক আগেই কেটে গেছে। তিনি এখন আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারদের একজন। আয়ের নিরিখেও শীর্ষ কয়েকজনের মধ্যেই থাকবে তার নাম। আর ফুটবলে জনপ্রিয়তার বিচারে তিনি আছেন সেরাদের কাতারেই।
Leave a Reply