রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পটির সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
এর ব্যয় প্রথমে ধরা হয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থ সংস্থানের জটিলতায় প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি পায় চারবার। এতে ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
ধারণা করা হচ্ছিল, প্রতিদিন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকা নগরীতে না ঢুকেই বিভিন্ন অঞ্চলের ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। এতে কমবে ঢাকায় বাইরের যানবাহনের চাপ ও রাজধানীর যানজট। কিন্তু অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন, ঢাকার দুই অভিভাবক সংস্থা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি করেছে প্রকল্পে বাস্তবায়ন জটিলতা। ঢাকার ব্যস্ততম এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের র্যাম্প বসানোর ইচ্ছা নগরীর যানজট নিরসনের বদলে বাড়াবে বলেই এখন প্রতীয়মান হচ্ছে।
এসব জটিলতা নিরসনে সোমবার (৮ মে) ঢাকা মহানগরীতে চলমান সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের মধ্যে সমন্বয়ের গঠিত কমিটির প্রথম সভা হয়। সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশর কারণে যানজট বাড়াসহ নানা অসঙ্গতির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তারা সভায় নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
এর আগে চলতি বছর ২২ জানুয়ারি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভায় কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের ওপর এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক (র্যাম্প) নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছিলেন মেয়র তাপস। কেননা, তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু হতে প্রধান বাঁধা দুটি; একটি হাতিরঝিলে পড়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪১ টি র্যাম্প। দ্বিতীয়টি পান্থকুঞ্জ পার্কের ওপর এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক (র্যাম্প) নির্মাণ।
প্রকল্পে সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোল প্লাজা; এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। প্রকল্পটি নির্মাণের সুবিধার্থে তিনটি ভাগ করা হয়েছে। একটি, এয়ারপোর্ট-বনানী-রেলস্টেশন; অপরটি বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার ও তৃতীয়টি মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণের মধ্য দ্রুতগতির বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে। তা ছাড়া এটি সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে হেমায়েতপুর- কদমতলী-নিমতলী- সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে মদনপুরের সঙ্গে। সেখানে আন্তঃজেলা নতুন বাস টার্মিনাল হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ পূর্বাঞ্চলের পরিবহনগুলো পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢাকায় প্রবেশ না করেই সরাসরি চলাচল করতে পারবে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলোও ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পদ্মা সেতুগামী বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে সরাসরি উঠে যাবে। আরেক রুট দিয়ে চলে যাবে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী রোডে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে জটিলতা ও কারণে অতিরিক্ত গাড়ীর চাপ ও যানজট বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামও। তিনি বলেন, যেকোনো প্রকল্প গ্রহণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের আগে সকল অংশীদারদের মতামতের সমন্বয় জরুরি। তবে পিপিপি প্রকল্পটি নগরীর যানজট নিরসনেই এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
সব অংশীদারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতামূলক মতামতের ভিত্তিতে এ পিপিপি প্রকল্পের অসামঞ্জস্যগুলো সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটি জন-বান্ধব ও রাজধানীর যানজট নিরসনে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন তিনি।
Leave a Reply