ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খানের (দাদা ভাই) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১০ জুন) বাদ আছর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আলিপুর গ্রামের সাহেব বাড়িতে তার মরদেহ নেওয়া হয়।
সেখানে মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে পারিবারিক কবরস্থানে মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের কবরের পাশে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ভাইস চেয়ারম্যান তানিয়া রব, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম, কবি ফরহাদ মজহার, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, বেগমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ সাইফুল্লাহ, নোয়াখালী জেলা জাসদের আহ্বায়ক আমির হোসেন বিএসসি, বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত, বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন মাসুদ, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী সি-জোন কমান্ডার মোহাম্মদ উল্যাহ প্রমুখ।
দাফনের আগে বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সিরাজুল আলম খানের মরদেহ পৌঁছালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষে পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সিরাজুল আলম খানের (দাদা ভাই) প্রথম জানাজা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন রোগে ভুগে শুক্রবার (৯ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিরাজুল আলম খান। এর আগে গত ১ জুন তাকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
৬ জানুয়ারি ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাজনীতির ‘রহস্যপুরুষ’ সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই)। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৬ দফা দাবির সমর্থনে জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে তার মতভেদ তৈরি হয় এবং তিনি ছাত্রলীগ থেকে সরে যান। পরবর্তীতে তার অগ্রণী ভূমিকায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদ প্রতিষ্ঠায় তিনি নেতৃত্ব দিলেও তিনি দলটির নেতৃত্বে আসেননি। তবে তার দিক-নির্দেশনায়ই স্বাধীনতার পর জাসদ তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।
জাসদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।
Leave a Reply