চালের দাম কমাতে প্রয়োজনে আবারও বাজার তদারকিতে নামবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের টিম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালাও করবে মন্ত্রণালয়টি। গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে জারি করা কারফিউর কারণে বন্ধ থাকা ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কার্যক্রম আগামী সোমবার থেকে দেশব্যাপী আবার শুরু হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসের খাদ্যবন্ধব কর্মসূচি চাল ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ফেয়ার প্রাইসে বিক্রির জন্য ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। আমরা বাজারের ওপর নজর রাখছি। তিনি আরও জানান, করপোরেট ব্যবসায়ী, মিলার (মিল মালিক), হাস্কিং মিলার এবং ডিলারদের নিয়ে একটি কর্মশালা করে নতুন আইন বিধি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। তবে তাতেও যদি ব্যবসায়ীরা কথা না শোনেন তাহলে বাজার তদারকি করবে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক টিম। তাছাড়া বাজারে চালের দাম বেশি রাখলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করবে। আইন ও বিধি অনুসারে শাস্তির আওতায় আনা হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের।
মন্ত্রী আরও বলেন, কোটা সংস্কারে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন হাইজ্যাক করে বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে। তারা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করেছে। দেশবাসী তা সচেতনভাবে প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের অপতৎপরতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কুকর্মের কারণে চালের সরবরাহ, পরিবহণ, বিপণন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন আর কোনো সংকট নেই। সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত খাবার মজুত রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি গুদামে প্রায় ১৬ লাখ ৮১ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। তার মধ্যে ১১ লাখ ৮৫ জাহার ৩৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫ মেট্রিক টন গম। চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো ধান, চাল, আতপ চাল এবং গম সংগ্রহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে কয়েকদিন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ২ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৮৭ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৫ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহের কথা রয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ২৮ জুলাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে খাদ্য বিভাগের উদ্যোগে করপোরেট ব্যবসায়ী, মিলার, হাস্কিং মিলার এবং ডিলারদের নিয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল। তবে কারফিউ বলবৎ থাকায় তা এ মুহূর্তে হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হলে এবং কারফিউ প্রত্যাহার হলে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার থেকে ঢাকা মহানগরীর ১২১টি ডিলার ও ৭০টি ট্রাক সেলসহ দেশের সব জেলা ও ৮টি সিটি করপোরেশন এলাকায় ফের ওএমএস কার্যক্রম চালু হচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশে সর্বমোট ৯৮৬ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসে ৫ কেজি চাল এবং ২ কেজি করে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। সপ্তাহে ৫ দিন ওএমএস কার্যক্রম চলবে। প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা এবং প্রতি কেজি আটার দাম ২৪ টাকা করে আগের দামেই বিক্রি হবে।
এছাড়া ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে আগামী মাসে। প্রতি কেজি চালের দাম ১৫ টাকা। বছরে পাঁচ মাস (মার্চ, এপ্রিল, আগস্ট সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে চাল বিক্রি করে সরকার। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ১ কোটি ৫০ লাখ পরিবারকে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আগস্ট মাসে বিক্রির জন্য ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা করে ফেয়ার প্রাইসে বিক্রি করবে টিসিবি। উল্লেখ্য, বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। সরকার টিসিবি এবং ওএমএসে প্রতি কেজি চাল বিক্রি করবে ৩০ টাকা। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হবে ১৫ টাকা।
Leave a Reply