1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

বাবার সাহসে ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান ফুলপরি

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৩৪৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

‘ক্যাম্পাসে গিয়েছি এক সপ্তাহও কাটেনি। এর মধ্যে আমার সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে চুপচাপ ছিলাম। ভয় পেয়ে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। পরে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে বাবার অভয় পেয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি।’

এভাবেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সাহসের বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী ফুলপরি খাতুন। রোববার (১৯ ফ্রেব্রুয়ারি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই গণমাধ্যমকর্মীদের।

ভুক্তভোগী বলেন, প্রতিবাদ না করলে আমার সঙ্গে আরও মারাত্মক কিছু ঘটত। আমার সঙ্গে যা হয়েছে অভিযুক্তদের যত বড়ই শাস্তি হোক তা ফিরে পাব না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি যাতে অন্যায় প্রশয় না পায়। ক্ষমতার অপব্যবহার কেউ যেন না করতে পারে। আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি বাবা-মায়ের বড় সম্পদ এটি ভেবে আত্মহত্যার কথা মাথায় আনিনি।

ফুলপরি বলেন, আমি চুপ থেকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫-৬টা বছর কষ্ট করে থাকব? আবার নতুন যারা আসবে তাদের সঙ্গে এমন করবে। ভবিষ্যতে এমন অন্যায় যেন কোনো মেয়ের সঙ্গে না হয়। আমার পরিবার অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে। বিশেষ করে আমার ভাইয়া, আব্বু, আম্মু, মামারা খুব সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমি নির্যাতনকারীদের সর্বোচ্চ বিচার চাই। যাতে আর কখনো কোনদিন কেউ এরকম কারও সঙ্গে করার সাহস না পায়।

ফুলপরির বাবা আতাউর রহমান বলেন, মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে সেগুলো নিয়েই চলতে হবে। আমার মেয়ে বাড়ি এসে আমার কাছে এসে ঘটনা বলল। তখন ভেবেছি আজ আমার মেয়ের ওপর হয়েছে, সামনে আরও হাজার হাজার মেয়ের ওপর হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি যাতে অন্যায় প্রশয় না পায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার ও কঠিন শাস্তি চাই। আমার মেয়ের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে তা যেন অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে না ঘটে।

ঘটনার দিনের নির্যাতনের বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। তিনি বলেন, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় আমি নির্যাতনের শিকার হই। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র‍্যাগ দেয় এবং হল থেকে বের করার চেষ্টা করে। পরে হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরসহ অন্যদের সহযোগিতায় বিষয়টির সমাধান হয়। পরের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তরা আপুসহ ৭-৮ জন গণরুমে (দোয়েল-১) ডেকে নিয়ে আমাকে মারধর করেন। তারা আমাকে এলোপাতাড়ি চড় মারতে থাকেন, মারার কারণ জানতে চাইলে মুখ চেপে ধরেন ও গালিগালাজ করেন।

ভুক্তভোগী জানান, এরপর ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নেন। পরে ওই ছাত্রীকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন তাকে। এরপর জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন এবং ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেন।

গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ফুলপরি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কমিটির আহ্বায়ক। এদিকে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আজ সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে তথ্য প্রমাণাদি চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির ডাকে বাবা ও মামাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী। ১২টায় আসার পর তদন্ত কমিটির কাছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঘটনার বর্ণনা দেন। বক্তব্য শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ি ফিরে যান ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা মন্ডল বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমরা মেয়েটিকে ডেকে ঘটনা শুনেছি এবং সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা। আতঙ্কিত গণরুমের অন্য ছাত্রীরা নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। অনেকে পারিবারিক চাপে তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রতিটি গণরুমে ১৫-১৬ জন করে থাকলেও এখন ৫-৬ জন করে আছেন। হলের একাধিক ছাত্রী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় পরিবার জানতে পেরে বাসায় যেতে বলছেন। এছাড়াও হলে একটা আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আজ সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় তদন্ত কমিটির ডাকে বক্তব্য দিতে ক্যাম্পাসে আসবেন ভুক্তভোগী ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুম। তাদের ক্যাম্পাসে থাকাকালীন নিরাপত্তা দেবেন প্রক্টরিয়াল বডি। প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমরা তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট