ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওইসব অঞ্চল। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও ঝুঁকিতে পড়েছে। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদীপাড়ের হাজারো মানুষ।
এদিকে একই সময়ে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ এই পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার ফলে উত্তরাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল।
উপজেলার কিসামত চরের বাসিন্দা কৃষক দুলাল ইসলাম (৩৫) বলেন, আজ ভোর থেকে বাড়িঘরে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় চরের অনেক পরিবার তাদের মালপত্র সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যাচ্ছে।
সোনাখুলি এলাকার কৃষক জয়নাল হোসেন (৫০) বলেন, গ্রামটি তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে হওয়ায় পানি বাড়লেই বন্যায় আক্রান্ত হতে হয়। সকালেই গ্রামে নদীর পানি ঢুকেছে। ঘরের ভেতরে এখন তিস্তার পানি।
ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পানি বাড়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমার ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। অনেক ফসলের খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (≥৮৯ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং জেলাসমূহের সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল এবং কতিপয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পরবর্তী দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে।
ডালিয়া পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছে। সকাল থেকে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টার পর তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
Leave a Reply