1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন

বন্ধ হয়ে গেল ‘ফুড ভিলেজ’

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৯৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

বন্ধ হয়ে গেল সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় অবস্থিত হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস। উত্তরের ২২ জেলার যাত্রীদের কাছে এটি ফুড ভিলেজ নামেই পরিচিত। উত্তরের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের পথে যাওয়া আসায় দূরপাল্লার প্রায় সবকটি জেলার বাসই যাত্রাবিরতি দিত এই হোটেলটিতে। ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হোটেলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। ঢাকা-রংপুর চার লেনের কাজের পাশাপাশি হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় নির্মাণ হবে ইন্টারচেঞ্জ। আর এই ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণেই বন্ধ হয়ে গেল এই হোটেলটি। এর সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল হোটেলটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চা-পান-সিগারেটের প্রায় ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান। তারা এখন কোথায় যাবেন তা জানেন না। এ ছাড়াও এখন দূরপাল্লার এই বাসগুলো কোথায় যাত্রা বিরতি দেবে এমন প্রশ্নও রয়ে গেছে। হোটেলটি বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন ঢাকা-পাবনা রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।

হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস সূত্রে জানা যায়, এসআর গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান হলো হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন এসআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য জি.এম সিরাজ। সেদিন থেকে পথচলা শুরু করে ১০ বছর পর আজ বন্ধ হয়ে গেল হোটেলটি।

চেয়ার-টেবিল পেতে হোটেলের সামনে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন রফিকুল ইসলাম ও আলাউদ্দিন নামে দুই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই ক্ষুদ্র ব্যবসাতেই চলতো তাদের পরিবারের জীবিকা। এখন তারাও যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন।

তারা বলেন, উত্তরবঙ্গের সব জেলার গাড়িগুলো এখানে দাঁড়ানোর কারণে যাত্রীরা এই হোটেলে নামতেন। তাদের বেশিরভাগই হোটেলের সামনের দোকানগুলো থেকে পান, সিগারেট, চিপস, পানীয় কেনাকাটা করতেন। এই লাখো মানুষের কাছে ছোট্ট ছোট্ট পণ্য বেচেই চলতো আমাদের জীবিকা। এখন হোটেল বন্ধ হয়ে গেল। আর কোনো বাসও এখানে দাঁড়াবে না। তাই আমাদের এখানে আর ব্যবসা রাখার সুযোগ নেই। এখন জানি না কোথায় গিয়ে নতুন করে কি ব্যবসা করব। হোটেলটা বন্ধ হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়লাম আমরা।

এদিকে হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেলের বিভিন্ন পদে কাজ করা প্রায় ৬০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন বলে জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা। হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাসে কাজ করা এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে ওয়েটার, সহকারী, বারবিকিউ, চাইনিজ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বাবুর্চিসহ বিভিন্ন পদে প্রায় ৬০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এরা সবাই কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

তিনি বলেন, হোটেলটি বন্ধ হয়ে গেলেও আমরা এখনো বেতন পাইনি। তবে আগামীকাল বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার এরশাদ আলী বলেন, ফুড ভিলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এখন থেকে শ্যামলী পরিবহনের সব বাস হোটেল হানিফে দাঁড়াবে। আপাতত ১৬ মাইল এলাকায় হানিফ হাইওয়ে হোটেল যেটি আছে সেটাতে দাঁড়াবে। তাদের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় একটি হোটেল থাকলেও সেটি আপাতত বন্ধ আছে। তবে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় দাঁড়ানো বাসগুলো ধরে রাখতে তারা আপাতত ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটি পুনরায় চালু করবে বলে জানিয়েছে।

নওগাঁ বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি কয়েকদিন হল এটা আঁচ করতে পারছিলাম যে ফুড ভিলেজ হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাবে। এর কারণে আমার যে নিজস্ব পরিবহন আছে এসপি ট্রাভেল সেটা অলরেডি ফুড গার্ডেন নামে আরেকটি হোটেলের সঙ্গে কথা বলে সেখানে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এভাবে সব গাড়ির মালিক পক্ষই এখন অন্য কোনো হোটেলের সঙ্গে কথা বলে সেখানে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করবে। আলোচনা সাপেক্ষে এখন ধীরে ধীরে গাড়িগুলো অন্য হোটেলে দাঁড়াবে।

 সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে পাবনার যাত্রীদের

ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়বেন পাবনা থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে পাবনাগামী যাত্রীরা। পাবনার পর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে এলেঙ্গার আগ পর্যন্ত তেমন কোনো ভালো মানের হোটেল না থাকায় বাসগুলো কোথায় যাত্রাবিরতি দেবে বা কোথায় দাঁড়াবে সেটা এখনো বলতে পারছেন না বাস মালিকরা।

পাবনা মালিক সমিতি বলছে- এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাল থেকে বাসগুলো কোথায় দাঁড়াবে তাও জানেন না তারা।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবীর বলেন, হোটেল ফুড ভিলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বা যানজট সৃষ্টির মতো কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিশেষ করে পাবনাগামী বা পাবনা থেকে ঢাকাগামী যে বাস এবং যাত্রীগুলো আছে তাদের জন্য একটা বড় সমস্যা হবে।

তিনি বলেন, বগুড়াগামী বা বগুড়া-ঢাকা রোডেও কিছু ভালো হোটেল আছে। রাজশাহী রোডে খুব ভালো না থাকলেও কিছু হোটেল আছে। কিন্তু পাবনা রোডে যাত্রাবিরতি দেওয়ার মতো তেমন কোনো হোটেলই নেই। হয় তাদের এলেঙ্গা বিরতি দিতে হবে না হলে একদম পাবনা গিয়ে। এটা তাদের জন্য একটু কষ্টকর হবে।

পাবনা বাস মালিক সমিতির অফিস সচিব আমিনুল ইসলাম বাবলু বলেন, শুনলাম আজ থেকে ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেল বন্ধ হয়ে গেল। এটা সত্যিই আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা হলো। কারণ পাবনা থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে পাবনার সড়কে এলেঙ্গার মধ্যে তেমন কোনো হোটেলই নেই। এখন বাসগুলো কোথায় যাত্রা বিরতি দেবে? এটা একটা বড় সমস্যা হলো। আমরা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, কাল থেকে বাসগুলো কোথায় দাঁড়াবে সেটাও জানি না। এটা একদিকে যেমন যাত্রীদের জন্য সমস্যা হলো, তেমনই সমস্যা হলো বাস মালিকদের জন্যও। তবে আশা করছি আমরা একটি বৈঠক দিয়ে খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে চলে আসব।

ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলের সিনিয়র উপ-মহা-ব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান রেজা সাগর বলেন, টানা ১০ বছর সেবা দেওয়ার পর আজ ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণে হোটেলটি বন্ধ করে দিতে হলো। আসলে ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলটি উত্তরবঙ্গের মধ্যে একটা সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হয়তো অনেকেরই মন খারাপ হবে, সমস্যা হবে, কিন্তু আমাদেরও কিছু করার ছিল না। এখন হাটিকুমরুল এলাকায় আর দূরপাল্লার ভালো বাসগুলোর যাত্রাবিরতি দেওয়ার তেমন কোনো জায়গাও থাকলো না।

তিনি বলেন, হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাসে পাবনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাই, কানসাট, নওগাঁ ও বগুড়াসহ আরও কিছু জেলার বাস যাত্রাবিরতি দিত।

শাহজাহান রেজা সাগর বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত অন্য কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কোথাও কোনো জায়গা এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়গুলো নিয়ে সাসেক প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আমরা নলকা ব্রিজের আশপাশে ভালো কোনো জায়গা পেলে সেদিকে যেতে পারি। এখন পর্যন্ত আমাদের এমনই চিন্তাভাবনা আছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সাসেক-২ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুব রাসেলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

হাটিকুমরুল নিউ টাউন হাট-বাজার পরিচালনা কমিটির পরিচালনা সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেন, ফুড ভিলেজ হওয়ার আগে জায়গাটি পতিত ছিল। সেখানে পতিত জায়গার পাশাপাশি ছোট ছোট খানাখন্দও ছিল। শুনেছি সেটি নাকি সরকারি জায়গা। তারা লিজ নিয়ে এসেছিল।

সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, ফুড ভিলেজ প্লাসকে ২ দশমিক ৬৭ একর জায়গা ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুই মেয়াদে ৫ বছর করে মোট ১০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮ সালে লিজ মূল্য ছিল ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪০ টাকা। তবে ঢাকা অফিস থেকে তারা লিজ নেওয়ায় আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারছি না। এ ছাড়াও ফুড ভিলেজ করার আগে সেখানে কী ছিল এটাও বলতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, তারা জায়গাটি নিয়ে মামলা করায় আমরা তেমন কিছু করতে পরছিলাম না। এদিকে ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পে জায়গাটি প্রয়োজন হওয়ায় সরকার অধিগ্রহণের কাজও সম্পন্ন করেছে। এখন সেখানে সাসেক তাদের প্রকল্পের কাজ করবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট