1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন

একমাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা
ফেনীতে ৭৪টি গ্রাম প্লাবিত, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজীতে একমাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে অন্তত ৭৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এদিন রাত ১০টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এর আগে এদিন বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে দক্ষিণ শালধর এলাকায় বাঁধের আরও একটি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। দুপুরের দিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়া এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বিকেলের দিকে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙনের দেখা দেয়। একমাসের ব্যবধানে এমন ভাঙনে বিপর্যস্ত পুরো জনপদ।

পরশুরামের কালী কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ফরিদা সুলতানা বলেন, অন্যান্য সময় পানি বাড়লেও ঘর পর্যন্ত আসেনি। এবার পানির স্রোত অনেক বেশি। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। ঠিকমতো রান্নাবান্না-চলাফেরা করা যাচ্ছে না। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমাদের কষ্ট অবর্ণনীয়।

dhakapost

এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, বাঁধ ভেঙে উপজেলায় অন্তত ৩১টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাদুর্গতদের মধ্যে এরইমধ্যে ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে আট হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সড়কে পানি থাকায় শুক্রবার রাত থেকে ফেনী-বিলোনিয়া আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে পরশুরামের ১৫টি ও ফুলগাজীর দুটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে নতুন করে আর বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা নেই। পানি নেমে গেলে বাঁধগুলো সংস্কার করা হবে।

প্লাবিত হলো যেসব এলাকা

পরশুরাম ও ফুলগাজীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। শনিবার (৩ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই উপজেলার অন্তত ৭৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

পরশুরাম উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে পৌরসভার বেড়াবাড়ি এবং বাউরখুমা এলাকায় দুটি স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এতে বাউরখুমা, বাউরপাথর, বিলোনিয়া, দুবলাচাঁদ, বেড়াবাড়িয়া, উত্তর গুথুমা, কোলাপাড়া এবং বাসপদুয়া গ্রামের প্রায় সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এবং কাউতলি গ্রামে দুটি স্থানে ভাঙনে উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, উত্তর কাউতলি, দক্ষিণ কাউতলি, দাসপাড়া, চম্পকনগর ও মেলাঘর গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।

উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর ও পশ্চিম অলকায় বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পূর্ব অলকা, পশ্চিম অলকা, নোয়াপুর, ধনীকুন্ডা, দক্ষিণ শালধর, জংঙ্গলঘোনা, কুন্ডেরপাড়, মালীপাথর ও পাগলীরকুল গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় নয় হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

এছাড়া বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর এবং সাতকুচিয়ার দুটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সাতকুচিয়া জমিয়ারগাঁও, বাঘমারা, চারিগ্রাম টেটেশ্বর, কহুয়া, তালবাড়িয়া গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

অন্যদিকে ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের নিলক্ষী, গাবতলা, মনতলা, গোসাইপুর, শ্রীপুর, বাসুরা, দেড়পারা, উত্তর দৌলতপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বদরপুর, মান্দারপুর, করইয়া, কালিকাপুর, কামাল্লা, নোয়াপুর, পৈথারা, জাম্মুরা, ফকিরের খিল, কমুয়া, বালুয়া, চানপুর, দক্ষিণ তাড়ালিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর, কুতুবপুর, ফতেহপুর, উত্তর আনন্দপুর; দরবারপুর ইউনিয়নের জগতপুর, বসন্তপুর, ধলিয়া, চকবস্তা, উত্তর শ্রীপুর, বড়ইয়া, পশ্চিম দরবারপুর, পূর্ব দরবারপুর; আমজাদহাট ইউনিয়নের তালবারিয়া, উত্তর ধর্মপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর, মনিপুর ও ইসলামিয়া বাজার; আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া, দৌলতপুর, তালপুকুরিয়া এবং জিএমহাট ইউনিয়নের মধ্যম শ্রীচন্দ্রপুরসহ মোট ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মাসেও ভারী বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী নদীর বাঁধের একাধিক স্থান ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট