1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ন

ফরিদপুরে বিএডিসির সূর্যমুখীর বাগান এখন জনপ্রিয় পর্যটন স্পট

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১২৫ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে ফরিদপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শহরতলীর গঙ্গাবর্ধী এলাকায় গেলেই দেখা মেলে সূর্যমুখীর ৬ একরের বিশাল বাগান। দেখে মনে হয় যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এটিই এখন ফরিদপুরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে। সূর্যমুখী বাগানে হাজারও মানুষ ভিড় করছে বিকেল বেলায় এবং ছুটির দিনে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে এ সূর্যমুখীর দুটি বাগান রয়েছে। অবশ্য বাগান বলা ভুল হবে। মূলত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে তেল উৎপাদনের জন্য কয়েক মাসের জন্য করা হয়েছে এ দুটি বাগান।

এখানে ছয় একর জায়গাজুড়ে গত ৮ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বোপণ করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এসব গাছ থেকে সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে। বর্তমানে বীজ থেকে হওয়া গাছের প্রায় প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে। যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন এখানে। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগানে নানা বয়সী মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে সূর্যমুখী বাগানে ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষের ভিড়ে বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। মানুষ যেন বাগানের ভেতর গিয়ে বা পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বাগান নষ্ট না করে এবং ফুলে হাত না দেয় এজন্য সার্বক্ষণিক হ্যান্ডমাইক নিয়ে নিষেধ করছেন পাঁচজন মালি। গতবার এখানে কাজ করেছেন দুজন মালি। আজ দুজন মালির সঙ্গে তিনজন বাড়িয়ে ৫ জন মালিকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার যে ৩ একর জমি বাড়ানো হয়েছে সেটি বর্তমান জায়গা থেকে পূর্ব পাশে অবস্থিত।

রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্বে থাকা মালি মো. কামরুজ্জামান মোল্লা (৩১) বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ এ ফুলের বাগান দেখতে, ছবি তুলতে আসেন। শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভিড় বাড়ে। মানুষ যাতে ফুলে হাত না দেয় বা বাগানের ক্ষতি না করে তাই আমরা দেখাশোনা করি। কেউ খেতের ভেতর যেতে চাইলে হ্যান্ড মাইক দিয়ে নিষেধ করা হয়। এই বীজ পাকা পর্যন্তই এই দ্বায়িত্ব পালন করি।

বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৬ বছর এখানে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হচ্ছে। তবে শুরুতে এ চাষের পরিধি খুবই সামান্য ছিল। অনেকটা পরীক্ষামূলক। গত ৬ বছর আগে এ বাগানের সৌন্দর্যের বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ফরিদপুরভিত্তিক কিছু গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ায় ফরিদপুরের জনগণের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যায় এই বাগান। সেই থেকে প্রতিবছরে এই বাগানে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। শীতের এই সময়ে এটি হয়ে ওঠে পর্যটন কেন্দ্র।

খেত ঘুরলে দেখা মেলে, জনতার উৎসবমুখর উপস্থিতি। শিশু, নারী, কিশোর কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও যবকদের উপস্থিতিতে এক গম গম পরিবেশ। সবাই ঘুরছেন, ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। কেউ কেউ বাঁধা উপেক্ষা করে নেমে পড়ছেন বাগানে।

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে দেখা যায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাস্টার্স (হিসাববিজ্ঞান) শিক্ষার্থী লক্ষণ চন্দ্র মন্ডলকে (২৬)। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে আমরা বন্ধুরা মিলে শহরের কোথাও না কোথাও ঘুরতে বের হই। তবে আজ এ বাগানে এসেছি। এই সময়টাতে ফরিদপুর শহরের প্রায় সবাই সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসে। এজন্যই আজ এসে ঘুরে গেলাম। ছবি তুলে নিয়ে গেলাম। আমাদের অনেক বন্ধু সূর্যমুখী বাগানের ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি তুলে সেই ছবি ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে দেওয়ার জন্যও এখানে এসেছে।

বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় একটি অভিজাত পোশাক বিপনণ ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি রিফাত হাসনাতকে। তিনি বলেন, শুক্রবার আমাদের ছুটি থাকে। সাধারণত ওইদিন পরিবারকে সময় দেই। এই শুক্রবার বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরার তো আলাদা আনন্দ থাকে। এজন্য এবার বন্ধুদের নিয়েই সূর্যমুখী বাগান দেখতে এসেছি। এই বিকেলটা এখানে এসে অন্যসব আটপৌরে বিকেলের চেয়ে অনেক ভালো কাটল।

বিএডিসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে। এক একর জমিতে পাঁচশত কেজি বীজ উৎপন্ন হয়। এক একর জমি চাষ করতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক একর জমি থেকে যে বীজ পাওয়া যায় তা দিয়ে যে তেল উৎপন্ন হয় তা ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এক মণ বীজ থেকে ১৬ থেকে ১৮ কেজি তেল উৎপন্ন হয়। প্রতি কেজি তেল বিক্রি হয় তিনশত পঞ্চাশ টাকা থেকে তিনশত আশি টাকা দরে।

বিএডিসি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক মো. রাশেদ খান বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য সুর্যমুখীর ভালো বীজ সরবরাহ করা। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। গত বছর এখান থেকে আমরা প্রায় এক হাজার ৩৫০ কেজিরও বেশি বীজ সরবরাহ করেছি। আমাদের বীজ সরকারি বীজ সংরক্ষণাগারের মোড়কে প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম দামে কৃষকের হাতে যায়। তাছাড়া আমাদের বীজ একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফলানো হয় বলে অন্য যেকোনো জায়গার বীজ থেকে আমাদের বীজের অঙ্কুরোদগম হার ভালো। এজন্য কৃষক আমাদের বীজে আস্থা বেশি।

তিনি বলেন, কৃষকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে গতবারের চেয়ে এবার আমরা দ্বিগুণ জমিতে সূর্যমুখীর বীজ চাষ করছি। আশা করছি এখান থেকে এবছর দুই হাজার ৯০০ কেজি বীজ আমরা সরবরাহ করতে পারব। সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টরেল মুক্ত ও শরীরের জন্য উপকারি বলে এর চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট সাড়ে সাত হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করা হয়েছে। ফরিদপুর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ চাষাবাদ হচ্ছে। সরিষা ভাঙানোর মেশিনে সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল আরহরণ করা সম্ভব।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট