প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনা বলেছেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সেবা, স্মার্ট শহর, স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সেখানে বাংলাদেশ পুলিশকেও স্মার্ট পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ পুলিশকে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবার আগে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন জনগণের ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ যেন আর কোনোদিন পিছিয়ে না পড়ে। ২০০৮-এর নির্বাচনে আমরা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১ সেটা বাস্তবায়ন করেছি। জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা উদযাপন করেছি। ঠিক সেই সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য ডেলটা প্ল্যান-২১০০ আমরা প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। আমি চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে এ দেশকে আমরা আরও উন্নত করব এবং সেভাবেই আপনারা আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না।’
রোববার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশের কাজের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন সন্ত্রসের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। হত্যা, লুটপাট, বোমা হামলা, আগুন সন্ত্রাস সব সময় দেশের অর্থনীতিকে স্থিমিত করে। সেক্ষেত্রে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক প্রতিরোধে ব্যাপক প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী।
শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীর কাজের মূল্যায়ন তুলে ধরে বলেন, এ বাহিনীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে গড়ে তুলতে হবে পুলিশ বাহিনীকে।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী যেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায়, সন্ত্রাস দমন বা কোনো কাজ করতে গেলে জনগণের সহায়তা একান্তভাবে দরকার। মানুষ যেকোনো বিপদে পুলিশকে পাশে পেলে তারা যেন অত্যন্ত আশ্বস্ত হয়। পুলিশ তার পেশাদারিত্ব ও সহমর্মিতা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করবে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে রাজশাহী সারদা পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টায় তিনি বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। হেলিপ্যাডে নামার পর পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত আছেন।
প্রধানমন্ত্রী আসার পর কুচকাওয়াজ শুরু হয়। সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেন এবং শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কুচকাওয়াজে ১২ জন নারী অফিসারসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করবেন। এর মধ্যে এক বছর মেয়াদি এই প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় বেস্ট একাডেমিক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর কবির, অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, বেস্ট ইন ফিল্ড শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব, বেস্ট স্যুটার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল রানা এবং বেস্ট প্রবেশনার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাকিবুল আলম ভূঁইয়াকে ট্রফি প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি এই নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, নবীন অফিসারদের অভিভাবকেরাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত আছেন।
Leave a Reply