রাজশাহীর পুঠিয়ায় রক্ষনা-বেক্ষন ও পানির প্রবাহ না থাকায় ছোট বড় নদ-নদী গুলো বিলুপ্তির পথে। সচেতন মহল বলছেন, সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নজরদারি অভাবে স্থানীয় দখলদাররা নদীর দু’পাড়ি কেটে ফসলী খেতের রুপ দিয়েছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশন ও খরা মৌসুমে অধিকাংশ ফসলী জমিতে সেচ কাজে পর্যাপ্ত পানি সংকট দেখা দেয়।
জানা গেছে, উপজেলার মধ্যে এক সময়ের গভীর খরস্রোত মুসাখাঁ, নারোদ, রায়চাঁদ, নিশানিশি, আইচাঁদ, সোঁকা, হোজা ও সন্ধ্যা নদীর বেশীর ভাগ অংশ ভরাট হয়ে ফসলি খেতে রুপ নিয়েছে। অনেক স্থানে নদী গুলোর কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তবে গত প্রায় চার বছর আগে নারোদ ও হোজা নদীর নামমাত্র সংস্কার করা হয়। তবে সে নদীতে পানির প্রবাহ নেই। যার কারণে নদীর গভীর এলাকা গুলোতে কিছু প্রভাবশালী লোকজন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।এলাকায় জনশ্রুতি আছে মুসাখাঁ নদীর উপজেলার পানানগর এলাকায় খড়স্রোতে ধনপতি চাঁদ সওদাগরের কয়েক হাজার মণ মাল বোঝাই বানিজিক নৌকা ডুবে হারিয়ে যায়। অথচ কালের বিবর্তনে সুন্দর, পাবলই, বারইন, রায়চাঁদ নদী বর্তমানে চিহ্ন পর্যন্ত নেই।
কলেজ প্রভাষক শাখাওয়াত মুন্সি বলেন, আশির দশকে পদ্মার শাখা বড়াল নদীর মুখে স্লইজ গেইট নির্মাণ করা হয়। যার ফলে পুঠিয়ার মুসাখাঁসহ সকল নদী ও খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। গত প্রায় দেড়যুগ আগে বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মূসাখাঁ নদী সংস্কার করেন। তবে পানি প্রবাহ না থাকায় কয়েক বছরে সংস্কারকৃত মুসাখাঁ পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে নদী গুলো পূণঃখনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা অতি জরুরী।
সাইদ আলী নামের একজন কৃষক বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে উপজেলার বিভিন্ন নদী গুলো আজ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। খরা মৌসুমে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য ওই নদী গুলোতে আর পর্যাপ্ত পরিমান পানি পাওয়া যায় না। আবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
আসু চন্দ্র দাস নামের একজন স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তি বলেন, এক সময় পুঠিয়া, নাটোর রাজপরগনাসহ পশ্চিম বাংলার কোলকাতা ও গাজিপুর রাজাদের রাজ্যর যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই নদীপথ। তাদের যাতায়াত ও পন্য বহনে নদী গুলো ব্যবহার করা হতো। সে সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সওদাগররা এই নদী পথ ব্যবহার করে বানিজ্যে করতো। তিনি বলেন, কয়েক দশক আগে উপজেলার নারোদ নদীর তীরে পুঠিয়ার কেন্দ্রীয় শ্মাশানঘাট ছিল। কিন্তু সেখানে বছরের বেশীর ভাগ সময় পানি সল্পতার কারণে তা হস্তান্তিত করা হয় মুশাখাঁ নদীর পীরগাছা এলাকায়। সেখানেও এখন বছরের বেশীর ভাগ সময় পানি সংকট থাকে।
উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু বলেন, বর্তমান আ’লীগ সরকার নদী রক্ষা ও পূণঃসংস্কারের কাজ জোরদার করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই উপজেলায় কয়েকটি নদী দখল মুক্ত করে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। আর বাকি নদী গুলো পর্যায় ক্রমে কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, আমাদের নজরদারীতে কোনো অবহেলা নেই। তবে পুঠিয়া উপজেলার কিছু নদ নদীর সীমানা দেখভাল করেন নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিনি বলেন, নতুন করে কিছু নদী সংস্কার ও রক্ষনা বেক্ষন কাজ শুরু হবে। এই উপজেলায় আমরা দেখছি কোন নদী গুলো বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সে গুলো যাচাই বাচাই করে কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply