স্মার্ট বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে চাকরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে তরুণ উদ্যোক্তা হতে গিয়ে বাড়িওয়ালার প্রতারণার শিকার হয়ে সম্প্রতি সর্বস্ব হারিয়ে আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত মাহমুদুর রহমান নামের একজন উদ্যোক্তা।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের মে মাসের ২১ তারিখ পিঁপড়া কিচেন রেস্টুরেন্ট নামে রুফটপ রেস্টুরেন্ট করার জন্য ২৭ গরীব এ নেওয়াজ এভিনিউ ছয় তলা বিশিষ্ট ভবনের ছাদে অবস্থিত দুইটি রুম সহ সম্পুর্ন ছাদ মাসিক দশ হাজার টাকা ভাড়ায় ত্রিশ হাজার টাকা অগ্রীম জামানতে তিন বছরের জন্য উভয় পক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে তিন শত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ হন। ভবন মালিক (মাসুমা আহমেদ) আমেরিকা প্রবাসী হওয়ার কারণে তার স্বামী (আহমেদ উল্লাহ) ভবন মালিকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন এবং স্ত্রীর দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত দুইটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভাড়াটিয়ার স্বাক্ষর রাখেন। রেস্টুরেন্টর মালিক ব্যবসায় সফলতা পাওয়ার জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সাজ সজ্জা এবং অবকাঠামো তৈরি করেন। রেস্টুরেন্টর মালিক প্রথম মাসের ভাড়া দিতে গেলে ইতিমধ্যে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগের কথা টের পেয়ে পরোধন লোভী ভবন মালিক লোভের বশবর্তী হয়ে দশ হাজার টাকা ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন ভাড়া পয়তাল্লিশ হাজার, পাঁচ হাজার লিফট বাবদ, জেনারেটর বাবদ দুই হাজার টাকা এবং জামানত বাবদ এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার টাকা। রেস্টুরেন্টর মালিক উল্লেখিত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অতিরিক্ত সাক্ষরিত দুই সেট নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বের করেন যেখানে উল্লেখিত টাকার পরিমাণই লেখা রয়েছে অন্যথায় ছাদ খালি করে দিতে বলে এবং জোর পূর্বক উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করেন।
রেস্টুরেন্টর মালিক স্থানীয় লোকজন ও আইনের আশ্রয় নিতে চাওয়ার কথা বললে ভবন মালিক বলেন সরকার কে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য দুইটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভাড়া কম বেশি করে চুক্তি করেছে বলে বুঝানো হবে। রেস্টুরেন্টর মালিক নিরুপায় হয়ে এবং বিনিয়োগ রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত ভাড়া এবং জামানত প্রদান করতে বাধ্য হন।পরবর্তীতে মাত্রাতিরিক্ত লোভী হয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করার লক্ষে উল্লেখিত ভবনের ছাদ সহ সিংহভাগ একটি আবাসিক হোটেলের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন এবং রেস্টুরেন্টর মালিককে ছাদ খালি করে দিতে বাধ্য করতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় রেস্টুরেন্টের লিফট এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ব্যাবসায়িক, আর্থিক এবং সুনাম নস্ট হয়।
স্থানীয় লোকজন এবং সালিশ এর মাধ্যমে কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে উপস্থিত সকলে রেস্টুরেন্ট মালিকের পক্ষে পুর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনার পক্ষে রায় দেন এবং উভয় পক্ষ তা মেনে নেয়।
এমতাবস্থায় ভবন মালিক মনেমনে সংক্ষুব্ধ এবং প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আরো দুস্ট বুদ্ধি এবং গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। লিফট বন্ধ থাকলে রুফটপ রেস্টুরেন্টে লোক আসেনা এই অপকৌশল অবলম্বন করে লিফট স্থায়ী বন্ধ করে দেয়। ভবন মালিককে লিফট চালু করতে বলা হলে ভাড়াটিয়া আবাসিক হোটেলের মালামাল উঠিয়ে লেবার নস্ট করছে বলে তারা ঠিক করে দিবে বলে জানান। আবাসিক হোটেলের সাথে কথা বললে ভবন মালিক ঠিক করে দিবেন বলে জানান। এভাবে দুই মাস লিফট বন্ধ রাখেন এবং সিঁড়ি ও গেইটে ময়লার স্তুপ রেখে চলাচলে বাধা প্রদান করে, মেইন ফটক সহ সব তালা চাবি পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে ফেলে। নিরুপায় হয়ে রেস্টুরেন্ট মালিক গত বছরের ২৯ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন যার নম্বর ২৪৭৩। ইতিমধ্যে আবাসিক হোটেলের ডেকোরেশন আংশিক সম্পন্ন করে লিফট চালু করে রমরমা ব্যবসা শুরু করলে উক্ত রেস্টুরেন্ট মালিক ও ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিতে গেলে আবাসিক হোটেলের লোকজন দিয়ে ভবন মালিকের পক্ষে বাধা প্রদান করা হয়। উপায়ন্ত না পেয়ে রেস্টুরেন্ট মালিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পুলিশের সহযোগিতা নেয়। পুলিশের সহযোগিতায় থানায় বসা হলে আইন অমান্যকরী, আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে পুলিশের দেয়া প্রস্তাব রেস্টুরেন্ট চালাতে বাধা না দেয়া অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে তিন মাসের অগ্রীম নোটিশ দিয়ে আইন সম্মত ভবে উচ্ছেদ করা সরাসরি নাকচ করে দেন। ক্ষতিপূরণ প্রদানে সহায়তা করা বা জোড় পূর্বক ব্যবসা পরিচালনা করতে ভবন মালিককে বাধ্য করা পুলিশের কাজ নয় মর্মে ন্যায় বিচারের জন্যে কোর্টে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। রেস্টুরেন্ট মালিক কোর্টে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জানতে পেরে ভবন মালিক আরও বেপরোয়া হয়ে সুকৌশলে চিকন বুদ্ধি প্রয়োগ করে মেইন গেট বন্ধ করে ভবনের ছাদের পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন এবং রেস্টুরেন্টর বৈধ মালিককে প্রবেশ করতে না দিয়ে রেস্টুরেন্ট মালিকের অংশীদার রোকসানা আফরোজ নির্জনার সাথে আঁতাত করে তার ভাই জনি সহ বহিরাগত লোকজন এর সহযোগিতায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে লোকজন নিয়ে রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন অবকাঠামো ভাংচুর করে ডাকাতি করে মালামাল নামীয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্টর মালিক মাহমুদুর রহমান জানতে পারলে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাধা দিলে তাকে জনি চর থাপ্পড় মারে এবং সাথে থাকা লোকজন আটকে ফেলে। তার ভাই কে ফোন দিলে সেও দ্রুত চলে আসে তাকে ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে খারাপ ব্যবহার করে নিরুপায় হয়ে থানায় যায়। মুল্যবান জিনিসপত্র কম্পিউটার, সিসিটিভি, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস, রেস্টুরেন্টের ক্যাশ বক্সে থাকা নগদ টাকা, টেবিল চেয়ার, গাছ পালা, লাইটিং, শিড়ি, গ্রিল, রেলিং, কিচেন শেড, স্টেজ, ডেকোরেশন সহ সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছিল। রেস্টুরেন্টের মালিক কৌশলে জীবন রক্ষার জন্য ৯৯৯ এ ফোন দেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। বের হওয়ার সময় এ নিয়ে ভবিষ্যতে বাড়াবাড়ি করলে জীবন নাসের হুমকি দেয়।
পুলিশ এসে রেস্টুরেন্টের মালিক কে উদ্ধার করে এবং আংশিক মালামাল জব্দ করে। ঘটনার পরিপেক্ষিতে রেস্টুরেন্টের মালিক উল্লেখিত দিনে থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলে অভিযোগ আমলে নেয় এবং কোর্ট এ গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেয়। সকলের সাথে পরামর্শ করে রেস্টুরেন্টের মালিক সমস্ত ডকুমেন্টস নিয়ে কোর্ট গিয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্তে পাঠান।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই সাব্বিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত পূর্বক অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যপারে ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিন বছরের জন্য ভবন মালিকের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ভবন মালিক আমার সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ এবং প্রতারণা করেছে তিনি এবং তার লোকজন আমার রেস্টুরেন্টে ভাংচুর করেছে মালামাল দিনে দুপুরে ডাকাতি করে আত্মসাৎ করেছে । আমার যা সাধ্য ছিল সর্বস্ব আমি এখানে বিনিয়োগ করেছি। আমার সবকিছু আত্মসাৎ করে আজ আমাকে পথে বসিয়েছে। এখান থেকে আয় করে যেখানে আমার সংসার চালানোর কথা ছিল সেখানে সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। দিনে দুপুরে এমন দস্যুতা পাকিস্তানি বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সারা দিয়ে আমি উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম, এদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চেয়েছিলাম। জীবনের শুরুতে ভবন মালিক/ বাড়িওয়ালা খ্যাত রক্ষকের কাছে ভক্ষকের শিকার হলাম, শিকার হলাম গভীর ষড়যন্ত্রের। প্রকৃতপক্ষে দেশ একজন উদ্যোক্তাকে হারালো এবং দেশই মুলত ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি দোষীদের সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি যাতে কোন বাড়িওয়ালা ভবিষ্যতে কোন ভাড়াটিয়ার সাথে বা কোন উদ্যোক্তার সাথে এমন অসদাচরণ করতে না পারে। দেশ যেন আর কোন উদ্যোগতা কে না হারায়।
Leave a Reply