উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। বন্যার শঙ্কায় আছেন তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের চরবাসী।
তিস্তার উৎপত্তি ভারতের সিকিমে। উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে এ নদীর পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে পানির চাপ বাড়ায় ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয় তারা। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে তারা সব গেট বন্ধ করে রাখে। ফলে পানি সঙ্কটে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়, নদীর ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী সঙ্কটে পড়ে। নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্যও বাধার মুখে পড়ে।
বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে এগিয়ে আসছে।
বর্ষা শুরু হলেই বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এবারও সেই কাজটিই করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের সড়ক পথ। চরবাসীর যাতায়াতের মাধ্যম হয়েছে নৌকা।
টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে বন্যার শঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। পানিবন্দি হওয়া ও তা কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরবাসী ও নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো। নদী পাড়ের মৎস্য চাষিরা তাদের পুকুরের মাছ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বন্যা হলে ভেসে যেতে পারে লাখ লাখ টাকার মাছ।
হাতীবান্ধার কিসামত নোহালী চরাঞ্চলের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে নদীতে পানি বেড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে বড় বন্যা হতে পারে।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড তিস্তা নদীর তীরে। বন্যা হলেই ছয়টি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি বাড়ায় ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ ৩ জুলাই সকাল ৬টায় ছিল ১৭ সেন্টিমিটার নিচে, ৯টায় ছিল ১৯ সেন্টিমিটার নিচে ও দুপুর ১২টায় ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ মিলিমিটার। তবে বড় কোনো বন্যার শঙ্কা নেই।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, নদ-নদীর পানি খবর সার্বক্ষণিক নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply