ঘোষণা দেওয়ার পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ এখনো চালু হয়নি। প্রথমে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এবং পরে ২০ মে ট্রেনটি চালুর ঘোষণা দেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (সিসিএম) সুজিত কুমার বিশ্বাস ও বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন।
কিন্তু রেলস্টেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও আমের বাজার জমে ওঠেনি। তাই জেলার আমের বাজারগুলো চালুর পর ট্রেনটি চালু হতে পারে।
গত বছর আমের মৌসুমের শুরুতেই ট্রেনটি চালুর দাবি করা হলেও মৌসুম শুরুর পরে ৩ দফা সময় পরিবর্তন করার পর রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ১৩ জুন ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটির উদ্বোধন করা হয়। এর আগে ১ জুন ও পরে ৮ জুন ট্রেনটি চালুর সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।
রহনপুরের আম ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, গতবছর মে মাসের শেষ দিকে আম বাজারে এলেও ট্রেনটি নানা নাটকীয়তার পর জুন মাসের মাঝামাঝিতে চালু করা হয়। এরপর আমের স্বল্পতা এবং লোকসানের কারণে চালুর ১১ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি। একইভাবে এ বছর ২০ মে চালুর কথা থাকলেও আবারও ট্রেন পরে চালু হবে বলে জানা গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবং আম ব্যবসায়ীদের মাঝে আস্থা আনতে না পারলে এবারও আমের ট্রেনটিকে লোকসান গুণতে হবে।
আম চাষি ও বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম একটু দেরিতে বাজারে আসে। এখন গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম বাজারে এসেছে। কিন্তু তা পরিমাণে অনেক কম। কয়েকদিনের মধ্যেই জমে উঠবে বাজার। ক্ষিরশাপাত, ল্যাংড়া, বোম্বাই আম বাজারে আসতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে। এসব আম আসলে বাজার জমে উঠবে। তখন ট্রেন চালু করলেই সুবিধা হবে।
রেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রথম ২০২০ সালের ৫ জুন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। ট্রেনটি ১৬ জুলাই পর্যন্ত আম পরিবহন করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, এ বছর এখনও আমের বাজারগুলো চালু হয়নি। ২১ মে রহনপুর ও ২৫ মে সদর উপজেলার আমবাজারগুলো চালু হবে। তাই কর্তৃপক্ষ আগামী ২৫ মে এরপর ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের সময়সূচি ঘোষণা করবে।
লোকসান বা ব্যবসায়ীদের আস্থার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। তাছাড়া ট্রেনটির সময়সূচি চুড়ান্ত হলে স্থানীয়ভাবেও ব্যাপকহারে প্রচার-প্রচারণা করা হবে। যেহেতু গত দুই বছর ধরে ১ টাকা ৩১ পয়সা কেজি দরে আম পরিবহন করছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন, এবছরও ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে। বেশি ওয়াগন নিয়ে ২টি ট্রেন চালু হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ বছর আশা করা যায়, ম্যাঙ্গো স্পোশাল ট্রেন থেকে ভালো কিছু রাজস্ব আসবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অ্যান্ড কর্মাসের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই বিশেষ ট্রেনে আম ছাড়াও লিচু, মৌসুমি ফলসহ সব ধরনের কৃষিপণ্যও কম খরচে ঢাকায় নেওয়া যায়। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম নিতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৩১ টাকা। কুরিয়ার সার্ভিসে এক টন আম ঢাকায় নিতে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ট্রেনে খরচ পড়ে মাত্র এক হাজার ১১৭ টাকা। এরপরও ট্রেনটি জনপ্রিয় হতে না পারাটা দুঃখজনক।
প্রসঙ্গত, প্রথমে মে মাসের শেষ সপ্তাহে এবং পরে সোমবার (১৫ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আম পরিবহন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় জানানো হয় এ বছর একটি ট্রেন বাড়িয়ে দুইটি ও ওয়াগন বাড়িয়ে ৮-৯টি ওয়াগনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে পথিমধ্যে আমনুরা জংশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ রোড, আড়ানী, আব্দুলপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম, জয়দেবপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে থামবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে শুধু আম নয়, আমের সঙ্গে শাকসবজিসহ অন্যান্য ফলমূলও পরিবহন করা যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানীগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন। ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত চলা ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২ কেজি। এতে রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৪৫৮ টাকা। দ্বিতীয় বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। সেই বছর আম পরিবহন করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৩ কেজি। রাজস্ব আদায় হয় ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা। সর্বশেষ গতবছর ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ কেজি আম পরিবহন করা হয়। এতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় হয়েছিল।
Leave a Reply