রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের খেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও এক সাঁওতাল কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তার নাম মুকুল সরেন (৩৫)। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম গোপাল সরেন।
রোববার দুপুরে বিষপানের পর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পাকস্থলি ধুয়ে বিষ বের করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
মুকুলের বাড়ি যে গ্রামে, তার পাশের গ্রামের নাম নিমঘটু। এ গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বোরো ধানের জমিতে সেচের পাানি না পেয়ে গত বছরের মার্চে বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের কৃষক মুকুল সরেন। মুকুল এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুকুল সরেন জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাকে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষই খেয়ে নিবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি এই বিষ পান করেন। মুকুল বলেন, সম্প্রতি বৃষ্টির পর অন্য সব কৃষকের একাধিকবার পানি নেওয়া হয়েছে গভীর নলকূপ থেকে। কিন্তু হাসেম আলী তাঁকেই শুধু পানি দিচ্ছিলেন না।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, তিনি শুনেছেন যে রোববার দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তারপর আসলেই বিষপান করেছেন কি না তা তিনি জানেন না। চেয়ারম্যান জানান, এবার বোরো চাষ করে মুকুল দুই দিন তাঁর কাছে গিয়েছেন। তিনি পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। একবার ইউপির একজন সদস্যকে তাঁর জমি দেখতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি দেখে এসে বলেছেন যে, জমিতে কয়েকদিন পরে পানি দিলেও চলবে।
মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন সবাই এসেছে একসাথে। আমার ডিপের মুখ একটা, সবাইকে তো একসাথে দিতে পারব না। গতকাল মুকুল মনে হয় চুয়ানি আর গাঁজা খেয়ে এসেছিল। এসে বলছে, পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাবো। তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নিল। আমি বললাম, পানি দিচ্ছি, তুই জমিতে যা। কিন্তু সে বলছে, তুই আমার জমিতে গিয়ে দে। তারপর সে চলে গেল। বিষ খেয়েছে কি না জানি না।’
এই গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে গতবছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর কৃষক লীগ নেতা সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ।
এবারও কৃষকের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘আবার বিষ খেয়েছে কেন? গতবছরের ঘটনার পর তো ওই ডিপের অপারেটরকে বাদ দিলাম। নতুন অপারেটর নিয়োগ দিলাম। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটলো? আমি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কৃষক মুকুল সরেনের সাথে কথা বলব।’
Leave a Reply