বাণিজ্য, তাইওয়ান প্রশ্ন, ইউক্রেন যুদ্ধ, বেলুনকাণ্ড, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাসহ একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তাপ বিরাজ করছে। এমনকি তাইওয়ান নিয়ে বেইজিংকে কার্যত পরোক্ষ সামরিক হুমকিও দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন।
আর তাই উভয় দেশই নিজেদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। আর এক্ষেত্রে পশ্চিমাদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে চীন। অন্তত বৈজ্ঞানিক ও গবেষণায় অগ্রগতির দৌড়ে প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় পশ্চিমের তুলনায় বেইজিং অনেকটাই এগিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ান একটি থিংক ট্যাংকের রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈজ্ঞানিক ও গবেষণায় অগ্রগতির দৌড়ে ৪৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির মধ্যে ৩৭টিতে চীন এগিয়ে থেকে তারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে একটি অস্ট্রেলিয়ান থিংক ট্যাংকের রিপোর্টে দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ান ওই থিংক ট্যাংকের নাম অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)।
তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, রোবোটিক্স, জ্বালানি, পরিবেশ, জৈবপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), উন্নত উপকরণ এবং প্রধান প্রধান কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে ইতোমধ্যেই আধিপত্য বিস্তার করেছে চীন। আর এর মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি সুপার পাওয়ার হওয়ার অবস্থানে রয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ট্র্যাকার রিপোর্টে অনুসারে, চীনের আধিপত্যের মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্রোন, মেশিন লার্নিং, বৈদ্যুতিক ব্যাটারি, পারমাণবিক শক্তি, ফটোভোলটাইক্স, কোয়ান্টাম সেন্সর এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিষ্কাশন।
কিছু ক্ষেত্রে চীনের আধিপত্য এতটাই প্রসারিত যে, নির্দিষ্ট প্রযুক্তির জন্য বিশ্বের শীর্ষ ১০টি নেতৃস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সবকটিই এশিয়ার এই দেশটিতে অবস্থিত বলে জানিয়েছে এএসপিআই।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, অন্যদিকে চীনের বিপরীতে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংসহ তুলনামূলকভাবে মাত্র সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
অস্ট্রেলিয়ান এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন সরকারের কাছ থেকে তহবিল গ্রহণ করে থাকে। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি শিল্পসহ বেসরকারি খাতের বিভিন্ন উৎস থেকেও তহবিল নিয়ে থাকে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ভারত ৪৪টি প্রযুক্তির ২৯টিতে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি যথাক্রমে ২০ ও ১৭টি প্রযুক্তিতে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে।
এএসপিআই বলছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে চীনের ক্রমবর্ধমান দক্ষতার পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী নীতি পরিকল্পনা। এছাড়া চীনের এই অগ্রগতি ‘গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য জেগে ওঠার’ বার্তা হওয়া উচিত বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
অস্ট্রেলিয়ান এই থিংক ট্যাংক পশ্চিমা দেশ, তাদের অংশীদার এবং মিত্রদের জন্য ২৩টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) অর্থায়নের জন্য সার্বভৌম সম্পদ তহবিল প্রতিষ্ঠা করা, প্রযুক্তি ভিসা সহজতর করা, ‘ফ্রেন্ড-শোরিং’ এবং মিত্র দেশগুলোর মধ্যে আরঅ্যান্ডডি অনুদানসহ নতুন সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেওয়া।
Leave a Reply