1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : editor :
  3. [email protected] : moshiur :
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন

গার্মেন্টস ‘ঝুট’র যথাযথ ব্যবহারে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের হাতছানি

মহানগর রিপোর্ট :
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

তৈরি পোশাক শিল্পে বছরে প্রায় চার লাখ টন ঝুট (উচ্ছিটাংশ) তৈরি হয়। এই ঝুট স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ও  প্রভাবশালী-মাস্তানরা নামমাত্র দামে কিনে নেয়।

পোশাক খাতের মালিকরা এ ঝুট স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বকশিস হিসেবে দিয়ে থাকে।

এবার সরকার পরিবর্তনের পর তৈরি পোশাক শিল্পের অস্থিরতা সৃষ্টিতে এ ঝুট ব্যবসায়ীরা অন্যতম নিয়ামক হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ অবস্থায় মালিক পক্ষে এখন এ সব ঝুট আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিতে রাজি নয়।

তৈরি পোশাক শিল্প এলাকা আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ঝামেলা এড়াতে কিছু লোককে এ সব ঝুট দিলেও উল্টো তারাই এখন ঝামেলা বাড়াচ্ছে। মালিকরা চাইছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্যের নীতিমালা হোক এবং সেই নীতিমালা অনুযায়ী এই ঝুট ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে প্রভাবশালীদের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে, ৫ বিলিয়ন ডলারের মত অতিরিক্ত অর্থ আসবে পাশাপাশি বাড়তি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

ঝুটসহ রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি। সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি  ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক শিল্পের ঝুট বা উচ্ছিটাংশ সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় রিসাইকেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে সরাসরি এই ঝুট সরবরাহ করা হবে।

সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ, বিজিএমইএ, গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা এবং রিভার্স রিসোর্সের যৌথ সমীক্ষায় মতে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে প্রতিবছর প্রায় চার লাখ টন ঝুট বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য তৈরি হয়। যার মধ্যে ৫ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হলেও, ৩৫ শতাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়। আর ৬০ শতাংশ প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

এ খাতের  উদ্যোক্তারা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্প থেকে বছরে যে চার লাখ টন ঝুট তৈরি হয়, এ থেকে পোশাক শিল্প মালিকরা সম্ভাব্য আয়ের ১০ শতাংশেরও কম অর্থ পেয়ে থাকে। যার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন ডলার। যদি রিসাইকেলিং করে সূতা তৈরি করা যায় তাহলে ‍এই ঝুট থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হতে পারে। এটা করতে পারলে একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। বিদেশে থেকে সুতা আমদানি কিছুটা কমবে। এর জন্য যে সব দেশ রিসাইকেলিং প্রযুক্তিতে দক্ষ তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে।

বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও প্রশাসকের সহায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য শহিদ উল্লা আজিম বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় চার লাখ টন ঝুট তৈরি হয়। যা নামমাত্র  দামে কারখানার আসে-পাশের কিছু লোককে দিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো তারা বাইরে প্রক্রিয়াজাত করে।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সরকারের বদলের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের ঝুট নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এবারও তাই হয়েছে। গত দেড় যুগের বেশি সময় একটি দলের স্থানীয় লোকজন ঝুটগুলো নিতো। সরকার পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক দলের লোকজন দখল নেয়। এই ট্রানজেকশন প্রিয়ডে তৈরি পোশাক শিল্পের অস্থিরতা অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে এই সব ঝুট ব্যবসায়ীরা। এই দখল নেওয়ার পরও বড়নেতা নেবে নাকি ছোটনেতা নেবে, নাকি শাখাদলের নেবে এই নিয়ে এবার বিভিন্ন শিল্প এলাকায় সংঘর্ষ  লম্বাসময় ধরে চলতে থাকে। এ জন্য অনেক কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে।

এই ঝুট ঝামেলা ইতোমধ্যে দূর হয়েছে। কিন্তু সতর্কতা অবস্থায় থাকতে হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প গুলোকে। এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, যে কোন উপায়ে হোক তৈরি পোশাক শিল্প এলাকা স্থিতিশীল রাখতে বদ্ধ পরিকর।

এই বিষয়ে বিজিএমইএ-এর সদ্য সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ঝুট ব্যবসা এবং ঝুট সম্পর্কিত রিসাইকেলিং অপারেশনগুলোকে বাহ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আশা করবো অর্থনীতি সচল রাখতে তৈরি পোশাক শিল্প সব ধরনের বাহ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।

তৈরি পোশাক শিল্পের এবারই প্রথম লম্বা সময় ধরে অসন্তোষ চলতে থাকে। আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থামলেও সেপ্টেম্বর তৈরি পোশাক শিল্পে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়। মূলত বাইরের অন্য সব আন্দোলনের কারণের পাশাপাশি এবার ঝুট ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব এই শিল্পে অসন্তোষে বড় ভূমিকা রাখে। তারা কোনো পক্ষ দখল হারিয়ে পুনর্দখল, কোনো পক্ষ  নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে শ্রমিকসহ অনুগত লোকদের ব্যবহার করে। একাধিক শ্রমিকনেতা জানান, এতে শ্রমিকদের সাংগঠনিক কাঠামোও ভেঙে পড়ে।

পোশাক শিল্পের ঝুট নিয়ন্ত্রণের ধরন নিয়ে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও সন্তুষ্ট নয়। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তৈরি পোশাক শিল্পে দীর্ঘ শ্রম অসন্তোষ হয়। এ সময়ে ঝুট ব্যবসা থেকে বঞ্চিত বিভিন্ন পক্ষ শ্রমিকদের উসকে দেয়। যার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এর ফলে অন্য যে সব কারণ শ্রমিক অসন্তোষের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে তার সঙ্গে যোগ হয় ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে প্রভাবশালীদের লড়াই।

এ সব কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১৮ দফা মেনে নেয় মালিক পক্ষ। এই সব দাবির মধ্য ১২ নম্বর দফা হলো, ‘ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করতে হবে।

ঝুট ব্যবসা তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পথে সমস্যা বলে মনে করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ঝুট ব্যবসায়ীদের আমরা ঝুট মাস্তান বলে থাকি। এরা শ্রমিকদের দমন করার জন্য মালিকের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করে। এই ঝুট ব্যবসায়ী সবাই স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি। মালিকরা যেমন তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে, এদের মধ্যে আবার ব্যবসা নিয়ে প্রতিযোগিতাও আছে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করুক তা তারা চায় না।

তিনি বলেন, আগস্ট মাসে সরকারের পতনের সাথে সাথে ঝুট ব্যবসায়ীদেরও পরিবর্তন হয়েছে। আগে ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন, এখন বিএনপি-জামাতের লোকজন ঝুট ব্যবসায় এসেছে। তাদের মধ্যে আবার কে কোন কারখানার ব্যবসা নিবে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কারখানা গুলোকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা করছে। এর প্রভাব পড়েছে শ্রমিকের রুটি-রুজির উপর। আমরা দাবি করেছি তৈরি পোশাক শিল্পে ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধ করতে হবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: সিসা হোস্ট